রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের কামারপাড়া বাজারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকানঘর গুড়িয়ে দেয়। সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালান জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম। অভিযানের পর দুই ঘণ্টার মধ্যে উচ্ছেদের জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কার্যালয় করার জন্য পৃথক দুইটি ব্যানার লাগিয়েছে। ব্যানারে দুইটিতে প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সভাপতি /সম্পাদকের ছবি রয়েছে।
সওজের অভিযান সূত্রে জানা গেছে, কামারপাড়া বাজারে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে অবৈধ দোকান থাকায় তীব্র যানজট তৈরি হত। সেখানে দুর্ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। এজন্য অভিযান চালিয়ে শতাধিক পাকা, আধাপাকা ও টিনসেটের দোকানঘর উচ্ছেদ করেন জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে সেখানে রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হাজির হন। এ সময় মহাসড়কের পূর্ব পাশে ‘রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রধান কার্যালয়’ লেখা সম্বলিত ব্যানার ঝুলিয়ে দেন তারা। এর পাশেই আরেকটি ব্যানারে লেখা আছে ‘৩ নং রায়ঘাটি ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের প্রধান কার্যালয়’।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এই দুই ব্যানার লাগিয়েছে। তাঁরা বিষয়টি উর্ব্ধতন নেতাদের অবগত করেই কাজটি করেছেন। তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আয়েজ উদ্দিন বলেন, উচ্ছেদ করা জায়গায় নয়। ফাঁকা জায়গায় যুবলীগের অফিসের জন্য ব্যানার ঝুলানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান ওরফে মিঠু বলেন, সেখানে ব্যানার টানিয়ে জমি দখলের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ইউনিয়নে ছাত্রলীগের দুইটি কমিটি চলমান। একটির সভাপতি আমি। তাঁর কমিটির কেউ এই কাজ করেনি। অন্য পক্ষ করতে পারে।
রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অন্য একটি কমিটির সভাপতি রানা হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলে করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ নাহিদ বলেন, উচ্ছেদ পর আমাদের বসার কোন অফিস না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে ব্যানার টাংনো হয়েছে।
ছাত্রলীগের ব্যানারের এক পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি রয়েছে। অন্য পাশে রাজশাহী পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু হোসেন, মোহন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেনের ছবি রয়েছে। ব্যানারের মাঝখানে নিচের দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম সম্বলিত লিখা রয়েছে।
এ দিকে যুবলীগের ব্যানারের এক পাশে যথারীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি রয়েছে। অন্য পাশে রাজশাহী পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ এবং রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু হোসেনের ছবি রয়েছে। ব্যানারের মাঝখানে নিচের দিকে বাংলাদেশ যুবলীগের নাম সম্বলিত লোগো রয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দির রাজ্জাক বলেন, সেখানে তাঁর ছবি দিয়ে ব্যানার টানানোর কথা শুনেছেন। তাঁর কাছে শুনে এটা করা হয়নি। শুনেছেন উচ্ছেদের সময় সেখানে রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে বলতে পারেন।
যুবলীগের ব্যানারে ছবির বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ বলেন, তিনি শুধু উচ্ছেদের কথা শুনেছেন। তারপরে কে তাঁর ছবি ব্যবহার করে জায়গা দখল করেছে এটা তিনি জানেন না। তিনি আরও বলেন, ‘এটাও উচ্ছেদ করে দিন।’
রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু হোসেন বলেন, তিনি উচ্ছেদের সময় সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষে বলেছিলেন মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিতে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ব্যানার টানিয়ে দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর এটা করা হতে পারে। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সেখানে এমপি মহোদয়ের ছবিও লাগানো হয়েছে শুনেছি। তাঁকে না জানিয়ে এ ধরনের ছবি কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। সরকারি জায়গায় কেউ দখল করতে পারবে না। তিনি এটা সরানোর ব্যবস্থা করবেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ উপবিভাগ-২ রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ্ মো. আসিফ বলেন, কামারপাড়া বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট ছিল দুই পাশেই। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে যানজট লেগেই থাকতো। দুর্ঘটনাও ঘটতো। তাঁরা একটি ভালো কাজ করে এসে শুনেন সেখানে দুইটি ব্যানার টানিয়ে জায়গা দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়েটি তাঁদের নজরে এসেছে। এটা সরকারি জায়গা। কেউ দখল করতে পারবেন না।