খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ কৃষিব্যবস্থাসহ সব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। দেশে ৬ মাস চালিয়ে নেয়ার মতো জ¦ালানির মজুদ থাকলে তা নিরাপদ বলে মনে করা হয়। একইভাবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ৬ মাস আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে দেশে ডলারের যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ৪ মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ জ¦ালানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উভয় খাতেই নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। দেশে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি চাহিদার বেশিরভাগই মিটানো হচ্ছে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। এর মানে জ¦ালানি খাতে আমরা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর নই। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের সামর্থ্য ও সম্ভাবনার উপর ভর করে এ খাতে আমাদের আত্মনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব। দুই দশক আগেও আমরা শুনেছি, তেল ও গ্যাসের উপর ভাসছে দেশ। সে সময় বিদেশে গ্যাস রফতানির গুজবও শোনা গেছে। কিন্তু গত একযুগে দেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত নিয়ে বেশকিছু অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও দেশে নতুন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে তেমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নের বদলে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে চাহিদা মিটানোর পরিকল্পনা আমাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ¦ালানি চাহিদা পূরণে অতিমাত্রায় আমদানির উপর জোর দিলেও পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গত একযুগে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। অথচ, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এ সময়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এর সিকিভাগ অর্থও যদি দেশের জ¦ালানি সম্পদ উন্নয়ন ও উত্তোলনে ব্যয় করা হতো তাহলে আজকে আমাদের জ¦ালানি খাতে এতটা ঝুঁকি থাকত না। দেশের জ¦ালানি খাতের উন্নয়নে একমাত্র রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানি বাপেক্সের অবদান ও সক্ষমতা অগ্রাহ্য করা যায় না। বাপেক্সকে শক্তিশালী করে তেল ও গ্যাস খাতের উন্নয়নে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। বাপেক্সের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হলে যে ধরনের এক্সপার্ট, দক্ষ জনবল এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির পর তারা সমুদ্রের ব্লকগুলো থেকে জ¦ালানি আহরণ শুরু করতে সক্ষম হলেও আমরা এখনো সমুদ্রে প্রয়োজনীয় জরিপকাজ, ব্লক ইজারার মতো প্রাথমিক কার্যক্রমও সম্পন্ন করতে পারিনি। অথচ, ব্লু-ইকোনমি নিয়ে আমরা জাতিকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছি। দেশীয় গ্যাস, কয়লা ও সম্ভাব্য তেলক্ষেত্র অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উত্তোলন করে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে জ¦ালানি খাতে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ¦ালানির সম্ভাব্য সব বিকল্প উদ্যোগগুলোতে আরো মনোযোগ ও বিনিয়োগ করতে হবে। পানিবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দূষণসহ ফসিল জ¦ালানির নানামাত্রিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।