পাঁচবছরেও শেষ হয়নি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজ। আদৌ এ ব্রিজটি নির্মান হবে কিনা তানিয়েও সঠিক কোন তথ্য দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্যে জানা গেছে, বিগত ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের ত্রিশ গোডাউন এলাকার সাগরদী খালের ওপর টাউন প্রোটেকশন বাঁধ সংলগ্ন গার্ডার ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ওইসময় ব্রিজ নির্মান কাজের উদ্বোধণ করেছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র মোঃ আহসান হাবিব কামাল। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিলো ১ কোটি ২০ হাজার টাকা এবং গৃহীত দর ধরা হয়েছিলো ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ৮১৯ টাকা।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচবছরেও ব্রিজটি নির্মান কাজ শেষকরা হয়নি। শুধু ব্রিজের দুইপ্রান্তে কিছু কাজ করা হলেও বাকি রয়েছে অনেক কাজ। ফলে একদিকে ত্রিশ গোডাউন এলকায় ঘুরতে আসা বিনোদন প্রেমী সাধারণ মানুষের মাঝে প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সরকারের এত সুন্দর একটি উদ্যোগ শুধুমাত্র তদারকির অভাবে এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের তৃতীয় ও চলতি বিল বিগত ২০১৮ সালের ২২ মে ৯৬ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ইতোমধ্যে উত্তোলন করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপালী কনষ্ট্রাকশন এবং এসএইচ এন্টারপ্রাইজকে (জেভী) একাধিকবার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেয়া সত্বেও তারা কেন কাজ করছেনা ঠিক বলতে পারছিনা। তাই এই কাজের কোন অগ্রগতি নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মেসার্স রুপালী কনষ্ট্রাকশনের স্বত্তাধীকারি অমল দাস বলেন, প্রথম অংশ কাজ করার পর কাজের কোন ফান্ড না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় আমরা কাজ করতে পারিনি। অপরদিকে এসএইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধীকারি শাহাবুদ্দিন আজাদ বলেন, ওই কাজ শুরুর সময়ই গাইড লাইনগত অনেক ভুল ছিলো। তখন সিটি কর্পোরেশনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই এখন বদলী হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে নদী-খাল-জলাশয় রক্ষা আন্দোলন বরিশালের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, নদী ভরাট করে বাঁধ ও সেতু নির্মান করার কারণে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুর র্মোশেদ একটি রিট করেন। যার কারণে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ স্থগিত রয়েছে।
অপরদিকে বিসিসির ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, ব্রিজ নির্মান হবে কি করে? প্রকল্পের দুই ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে চেয়েছিলো। তারা (ঠিকাদাররা) কাজ করবে কি? তারা বিল উঠানোর জন্য সর্বদা অস্থির ছিলো। শুধু তাই নয়; এখানে ভেড়িবাঁধ ও ব্রিজ দুটোই আরো ভিতরে নির্মানের কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে এ ব্রিজের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরও আপত্তি জানিয়েছেন।
বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক শামীম আহমেদ বলেন, আমি মনে করি ত্রিশ গোডাউনের এই ব্রিজটির নির্মান কাজ পুরোপুরি শেষ করা হলে প্রতিদিন এখানে আসা ভ্রমন পিপাসুরা আরো বেশি বিনোদন মুখী হবেন। পরিপূর্নতা পাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কীর্তনখোলা নদী তীরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ত্রিশ গোডাউন। তাই ব্রিজটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।