লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির পর কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে তিস্তার পানি। তিস্তার পাশাপাশি ধরলা নদীর পানিও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। খাদ্য, বাসস্থান সংকটসহ পোষ্য প্রাণী নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পানি ধীরে ধীরে কমলেও আরও ২/৩ দিন থাকবে পানিবন্দী অবস্থা। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবের পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। সেই সাথে চরাঞ্চলে রয়েছে গো-খাদ্যের সংকট।
বুধবার (৩ অক্টোবর) সকালে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হলেও ভাটি এলাকায় এখনো পানিবন্দী অবস্থা বিরাজ করছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ এখনো হাঁটু ও কোমর পানিতে ডুবে আছেন। তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার এসব মানুষ বাসস্থান, খাদ্য ও নিরাপদ পানিসহ স্যানিটেশন সংকটে পড়েছেন। রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ ডুবে যাওয়ায় জেলায় প্রায় দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।
পোষাপ্রাণী নিয়েও এসব মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। কোনরকমে উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে নানান অনিশ্চয়তা দিন পার করছেন তারা।
তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী,ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,কালমাটি,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, বড়বাড়ি,রাজপুর,গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকালের তুলনায় পানি কিছুটা কমলেও পানিবন্দী এসব মানুষ শঙ্কা নিয়েই দিন পার করছেন। নানান সংকট সহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট বন্যায় বারিঘর ডুবে গেছে। গরু ছাগল, হাস-মুরগী নিয়ে সমস্যায় পড়ে আছি। থাকার জায়গা না থাকায় মানুষের বাড়িত গিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা চাই সরকার পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা নদী খননসহ মহাপরিকল্পনা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক। তাতে আমরা নদী তীরবর্তী মানুষগুলো রক্ষা পাবো।
এদিকে বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ হয়েছে। বানভাসীরা বলছেন তাদের প্রয়োজনের তুলনায় এটি অপ্রতুল।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বানভাসীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যার্তদের তালিকা করে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ধীরে ধীরে আরও কমে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সজাগ রয়েছি।