দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে কাঁকড়া নদীর ওপর নির্মিত ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুর নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ৫ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে রাখায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ওইপথ দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে উপজেলার দক্ষিণ দিকের মানুষের প্রাণের দাবী ছিল ভিয়াইল ও পুনট্টি ইউনিয়নের সংযোগস্থল আত্রাই নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। এতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। মের্সাস সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণের কাজটি পেয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা অদ্যাবধি সম্পন্ন হয়নি। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরে যাতায়াতে এ নদীই প্রধান অন্তরায়। এ ছাড়া ভিয়াইল ও পুনট্টি ইউনিয়নের মানুষের প্রয়োজনীয় কাজ, কষিপণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে এ নদী দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। এখানে নদীতে বছরের অন্তত ৮ মাস পানি থাকে। এ কারণে বর্ষায় নৌকা ও শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করতে হয়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ওই এলাকার বিনু চন্দ্র জানান, নদীর ওইপারে ইউনিয়ন পরিষদ। যেকোন কাজের জন্য আমাদেরকে নদী পার হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতেই হয়। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বা সমাবেশে গ্রামের সবাইকে যদি এক সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয় তাহলে আমরা যেতে পারি না। কারণ ঘাটে মাত্র একটি নৌকা থাকায় সময়মতো সবাই এক সাথে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারি না।
স্থানীয় জবেদ আলী বলেন, সেতু নির্মাণে যেমন ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে সেই সাথে সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবের কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হলেও সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
হিরা নামে এক ব্যক্তি জানান, কাঁকড়া নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া যাতায়াতের যে বিকল্প রাস্তা রয়েছে সেটি অন্তত ৭ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাছাড়া এই সেতুটি হচ্ছে দুই ইউনিয়নের সংযোগস্থল। হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম এই সেতুটি দ্রুত মানুষের চলাচলের উন্মুক্ত করার দাবী করেন তিনি।
ভিয়াইল গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেতুটির নির্মাণ কাজ অন্তত ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। সেতুর নির্মাণ কাজ এত বিলম্ব হওয়ায় আমরা চিন্তিত। কবে নাগাদ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক হাসান জানান, ঠিকাদারের বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখায় সেতু নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয়েছে। তাদের কয়েক বার চিঠি দিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমের পরেই তারা পুনরায় সারা না দিলে বাতিল আবেদন চেয়ে বাকি কাজ শুরু করা হবে। তবে সেতুটির পিলারসহ অন্যান্য কাজ মোটামুটি ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।