যুবদের কল্যাণে কাজ করছেন কিশোরগঞ্জে যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী। যুব সংগঠক হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে গবাদী পশু, হাঁস মুরগী, মৎস্য চাষ, গরু মোটাতাজা করণ, কৃষি বিষয়ক ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেকার যুব ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরীতে মনোযোগি হন। প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগিয়ে একজন যুব সংগঠক হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
আমিনুল হক সাদী বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি “বাংলার মানুষ বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। বাংলার যে ছেলে তার অতীত বংশধরদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে না সে ছেলে সত্যিকারের বাঙালি হতে পারে না” এই বাণীটির প্রতি আকৃষ্ঠ হয়ে ইতিহাস ঐতিহ্যর প্রতি মনোনিবেশ হই। তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উক্তি “একটা ডিগ্রি নিয়েই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কীভাবে কিছু করা যায়ৃ ‘নিজে কাজ করব, আরও দশ জনকে চাকরি দেব, নিজে উদ্যোক্তা হব, নিজেই বস হব’। সে কথাটির প্রতি আকৃষ্ঠ হয়ে সাদী গুরুদয়াল সরকারী কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স পড়াশোনা করেও সরকারী চাকুরীর দিকে না তাকিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রথম দফায় ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ‘সাদী সমন্বিত কৃষি খামার’ গড়ে তোলেন। এই খামারের অধীনে পুকুরে মাছ চাষ, নিজস্ব জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন করেন। তার মুনাফা দিয়ে কয়েক কাটা জমিও ক্রয় করেছেন। এছাড়াও শাক সবজি আবাদ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন।
সাদীর সবচে বড় সাফল্য হলো নিজেকে একজন সফল যুব সংগঠক হিসেবে গড়ে তোলা। যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার বেকার যুব সম্প্রদায়ের “যুব উন্নয়ন পরিষদের ” ছায়াতলে সংগঠিত করে বিভিন্ন অফিস আদালতের মাধ্যমে বিশেষ করে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলেছেন কয়েক শতাধিক যুব ও যুব মহিলাকে। অনেকেই প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে আজ সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেছেন। সাদী বেকার জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে তাদের নিয়ে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন “যুব উন্নয়ন পরিষদ’ নামে একটি যুব সংগঠন। এ সংগঠনটির মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে চলেছেন তিনি। এ সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার দারিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় আড়াই হাজার যুব ও যুব মহিলাকে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী দফতরের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলেন। অনেকেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে দেশ বিদেশেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় বেকার যুবকরা প্রশিক্ষণ পেয়ে পোল্ট্রি, কৃষি, দর্জিসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে নিজেদেরকে সফল হিসেবে গড়ে তোলেছেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অনেক বেকার যুবকের।
করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যুব উন্নয়ন পরিষদের মাধ্যমে সংগঠনের উদ্যোগে মাস্ক স্যানিটাইজার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। দরিদ্রদেরকে আর্থিক সহায়তাসহ মানবিক কাজ করছেন। জেলার অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন যুব সংগঠক সাদীর সফলতায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারী যুব উন্নয়ন সংস্থা ‘যুব উন্নয়ন পরিষদ’র সভাপতি যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীকে জেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে যুব কার্যক্রমে অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ সংগঠকের স্বীকৃতি দেন জেলা প্রশাসন। চলতি বছরের ৫ আগস্ট শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ হোসেনপুর রোডে অবস্থিত কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়ের হল রুমে আয়োজিত জাতির পিতার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর ৭৩ তম জন্মবার্ষিকীতে প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ স্বীকৃতি সনদ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফারজানা পারভীন।
২০২১ সালে গড়ে তোলেন ‘বয়স্ক ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বয়স্কদেরকে শিক্ষা দান ও বেকার যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সদস্যরাও আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠান সমূহের নিবন্ধন দিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদফতর ও গণগ্রন্থাগার অধিদফতর সাদীর কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। এসব প্রশংসনীয় কার্যক্রমে সাদী পেয়েছেন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শতাধিক সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার।
ইতিমধ্যে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনিস্টিউট সাভার, ঢাকা থেকে যুব বিনিময় কর্মসূচি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে গত ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই ২০২২ ইং ৫ দিন ব্যাপী দেশের ৬৪ টি জেলা থেকে আগত যুব প্রতিনিধিদের নিয়ে যুব মিনিময় কর্মসূচীতে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে অংশগ্রহণকারী যুব সংগঠক হিসেবে অন্যতম। তিনি সেরাদশে তৃতীয় বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনিস্টিউট কর্তৃপক্ষ পুরস্কার প্রদান করে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ বিষয়ের বাস্তব অভিজ্ঞাতার আলোকে কিশোরগঞ্জ জেলা, উপজেলাসহ তৃনমূল পর্যায়ে বেকার যুবদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য আত্মকর্মী ও সাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন।
আমিনুল হক সাদীর পথচলার শুরুটা ছিলো খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে। নানা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে আজ এক যুগে পা দিয়েছে যুব উন্নয়ন পরিষদটি। তিনি ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতায় স্থানীয় ও দেশের জাতীয় অনেক সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। বহু প্রতিভাধর যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠিত যুব সংগঠনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এতদাঞ্চলের বেকার জনগোষ্ঠীর আত্মসামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে।
জাতীয় যুব পদক ২০২০ প্রাপ্ত শিবলী সাদিক নোমান বলেন, ২০১৮ সালে সাদী ভাইয়ের যুব সংগঠনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উদ্যোগে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমি নিজেও মৎস্য ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করি। যেটি জেলা প্রশাসন ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে আমাকে জাতীয় যুব পদকে ভূষিত করে।
কিশোরগঞ্জ সদরের মহিনন্দের বাসিন্দা শ্রেষ্ঠ সফল আত্মকর্মী জাতীয় যুব পদক ২০১৩ প্রাপ্ত নুরুল আরেফিন লিংকন বলেন, যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী আমার ফার্ম নিয়ে অনেক প্রতিবেদন তৈরী করে এলাকার বেকার যুবদের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের প্রসারে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত যুব সংগঠনের প্রশিক্ষিত সদস্যরা আমার ফার্মে এসে হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জেড এ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন পরিষদকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। তার সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় যুব দিবসসহ বিভিন্ন প্রশংসনীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তার সাংগঠনিক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরুপ সদর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ সংগঠকের স্বীকৃতি সনদ লাভ করে। পরবর্তীতে জেলায় শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে সনদ অর্জন করে। তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।