তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। খালি পায়ের মানুষ আর দেখা যায় না। আকাশ থেকে কুঁড়ে ঘর আর দেখা যায় না। দেশের রাস্তা-ঘাট বদলে গেছে। আজকের এই বদলে যাওয়াটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।’ শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন করেছেন। সবক্ষেত্রে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য হচ্ছেন নারীরা। আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী নারী। অথচ, ১০ বছর আগে কেউ ভাবেনি যে, একজন মহিলা এসপি, ডিসি ও বিচারপতি হবে। শেখ হাসিনা মা-বোনদের হাতে ক্ষমতা দিয়েছেন। এ ছাড়া এখন প্রতিটি ইউনিয়নে ১ থেকে ২ হাজারের বেশি নারীকে নানা ধরনের ভাতা দেয়া হয়। নারীরা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছে, এটা কিন্তু মা-বোনেরা দাবি করে নাই। আর এ ধরনের ভাতা ইউরোপে দেয়া হয়, আমাদের নেত্রী সেই ভাতা আমাদের দেশে প্রচলন করেছেন। ইউরোপে স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলা ভাতা নাই, আমাদের নেত্রী স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলা ভাতাও চালু করেছেন। এদেশে খালেদা জিয়াও তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু তিনি এসব ভাতা দেয় নাই।
বঙ্গবন্ধুর রক্ত পরাভব মানে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আপসের রাজনীতি করেন নাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার চাই। তাঁর কন্যাও আপসের রাজনীতি করে না। দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, আজ তা প্রমাণিত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে সংকট চলছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশে^ তেলের দাম ১০০ ভাগ বেড়েছে। ৪ ডলারের এলএনজি এখন ৪২ ডলার। ভারতে ৬ মাস আগে তেলের দাম বেড়েছে। সেখানে বাংলাদেশী টাকায় প্রতিলিটার ডিজেল ১১৬ টাকা, পেট্রোল ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা। তিনি বলেন, এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নাই। বিশ^বাজারে দাম কমলে এদেশেও সমন্বয় করা হবে।
শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন উল্লেখ করে তথ্য মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ^ পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ লোডশেডিং সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এর আগে বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ ও ৭৫’র ১৫ আগস্টে শহিদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম বলেন, আজকের দিনের প্রথম ও একমাত্র কাজ হলো নীরবতা পালন করা এবং শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা। ৭৫’র ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে জাতির সঠিক ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ কামাল শুধু একজন শেখ কামাল ছিলেন না, তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, তিনি মুক্তিবাহিনির অন্যতম সংগঠক ছিলেন, তিনি ছিলেন মুক্তিবাহিনির প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি। আর শেখ জামালও শুধু একজন শেখ জামাল ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনির একজন কমিশন প্রাপ্ত অফিসার, তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল। বিএনপি-জামাত সেই ইতিহাস আমাদের জানতে দেয়নি। আর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ৭ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তান খন্দকার মোস্তাকের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। এটাই প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত ছিল। জিয়া, খালেদা, ড. ইউনুস ও পাকিস্তান একইসূত্রে গাঁথা। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে শেখ হাসিনা। এরা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে। এখন গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আসলে বাংলাদেশকে পেছন থেকে টেনে ধরাই তাদের উদ্দেশ্য।
গুজবে বিশ^াস না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের কাজ সামনের দিকে তাকানো। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রেমিটেন্সও ভাল। এবছর রপ্তানি আয় হবে ৬২ বিলিয়ন ডলার। দেশের অর্থনীতি নিয়ে অপপ্রচারকারীদের জবাব দিয়ে শাহ্রিয়ার আলম আরও বলেন, বিশে^র ১৫০ থেকে ১৭০টি দেশ দেউলিয়া হলে, তবেই বাংলাদেশের গায়ে আঁচড় লাগলেও লাগতে পারে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ঘরে ফিরবে না বলে এ সময় তিনি জানান।
মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহী জেলা, মহানগর এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।