হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি বাড়ানো হয়েছে ৬ টাকা। বৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ছন্দপতনের কারণে নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর আবার ডিজেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৩৪ টাকা। ফলে পাওয়ার টিলারে জমি চাষের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। ‘সার, সেচ আর হাল চাষের মূল্য’ সব মিলিয়ে এবার চলতি আমন মৌসুমে বগুড়ার আদমদীঘিতে কৃষকের ওপর বাড়তি খরচের চাপ। এ কারণে বিগত বছরের চেয়ে এবার আমন চাষে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে কৃষকদের তাইতো কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ।
জানা গেছে, মৌসুম অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ বৃষ্টির মাস। তবে এবার বৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটেছে। কাঙ্কিত বৃষ্টি না পাওয়ায় আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠে চারা রোপণ শুরু করেছেন কৃষকরা। এই অবস্থায় হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি বাড়ানো হয়েছে ছয় টাকা। সেই সাথে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। এতে খরচ বাড়বে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষে। ফলে এবার আমন চাষে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে কৃষকদের।
সান্তাহার কায়েতপাড়া গ্রামের কৃষক রুস্তুম আলী বলেন, প্রকৃতির বিরূপ আচরণে এবার বেশির ভাগ কৃষক সেচ নির্ভর হয়েছেন। এতে সেচের জন্য বাড়তি খরচ গুনতে হবে। সঙ্গে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, আবার শ্রমিকসংকটও ভোগাচ্ছে। এখন নতুন করে ডিজেল তেল ও ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামের কৃষক আবদুল হাই সিদ্দিক বলেন, এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সার ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০ টাকা, পটাশ ১৫ কেজি ৩৬০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসাম ১০ কেজি ২২০ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক, হাল চাষ ও চারা রোপণ করতে ৩ হাজার ২শ টাকা এবং সেচ খরচ হবে ১ হাজার টাকা। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এবার সার, সেচ ও হাল চাষ খরচে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো।
আদমদীঘি উপজেলার কদমা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, তিনি বিগত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য নিতেন ১৮০ টাকা (এক চাষ)। হঠাৎ ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে হাল চাষের দাম বাড়ানোর সীদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত শনিবার থেকে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে যেসব জমি চাষ করবেন তাদের প্রতি বিঘায় এক চাষের মূল্য ২৫০ টাকা নির্ধারন করেছেন।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন মিলে প্রায় ১২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমি চাষের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বিক্রেতারা যেন কোনো ভাবেই অতিরিক্ত মূল্য না নিতে পারে এজন্য নজরদারি রয়েছে। যদি কেউ সারের দাম বেশি নেয় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।