দানাপানি এতোটুকু তবু ফুলে উঠে
রঙ তার মনোহরা ধরা দেয় ঠোঁটে
মেলায় পথের ধারে এ দোকান খোলে
খাবারটা খেতে জোটে যত ছেলেপুলে।
কোথায় হারিয়ে গেল শৈশবের সেই হাওয়াই মিঠাই। হাওয়াই মিটাই নেবে, হাওয়াই মিঠাই একসময় গ্রাম ও শহরের অলিগলিতে এভাবেই হাঁক মেরে রঙবেরঙের হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতো ফেরিওয়ালারা। শৈশবের সেই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা ফেরিওয়ালাদের গ্রামেগঞ্জে এখন তেমন একটা দেখা না গেলেও মাঝে মাঝে মেলা ও বান্নিতে তাদের দেখা মিলে। হয়তো আধুনিবতার যাতকলে সেই ফেরিওয়ালারা এখন নতুন পেশা বেছে নিয়েছে। গত ১০ আগস্ট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া খরমপুর শাহপীর কল্লা শহীদ (র) মাজার শরীফে সাতদিনব্যাপী বার্ষিক ওরশ শুরু হয়েছে। ওরশ উপলক্ষে খরমপুর মাজার শরীফ এলাকায় দোকানীরা নানা পদের খাদ্য সামগ্রিসহ খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেছে। দোকানীদের মধ্যে হাওয়াই মিঠাইয়ের একটি দোকানও আছে। দোকানদার হাঁক দিয়ে হাওয়াউ মিঠাই বিক্রি করছেন। কথা হয় সাদ্দাম হোসেন নামের এক যুবকের সাথে। তার বাড়ি জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে। সাদ্দাম আগে ফেরি করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতো। তবে এখন শুধু মেলা -বান্নিতে গিয়ে বিক্রি করেন। কেমন বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম জানায়, হওয়াই মিঠাইয়ের বেশির ভাগ ক্রেতাই শিশু। তবে বড়রাও অনেক সময় শখ করে সন্তানদের জন্য কিনে নেয়।ওরশ শুরুর দিকে ভালো বিক্রি হলেও এখন বিক্রি তেমন একটা হচ্ছে না। তবে তিনি আশা করছেন বেচাবিক্রি বাড়বে।নরসিংদীর আলমাস হোসেন নামের এক যুবক জানায়, হাওয়াই মিঠাই দেখে শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। একটা সময় হাওয়াই মিঠাই দেখলে ফেরিওয়ালার পিছু নিতাম। আজও একটা কিনে পরখ করেছি। তবে শৈশবের সেই স্বাদ এখন আর পাচ্ছি না।
পৌরশহরের টানপাড়ার ইকবাল হাসান নামের এক ব্যবসায়ি বলেন, আগে মেলায় গেলে বায়না ছিল হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতে হবে। অনেক সময় জমানো টাকা দিয়েও কিনতাম। তুলার মতো নরম খাবারটি খাওয়ার চেয়ে তখন কেনার আনন্দ ছিল অনেক বেশি।
খরমপুর শাহপীর কল্লা শহীদ মাজারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান খান খাদেম বলেন, ঐতিহ্যের অনেক খাবারই এখন আর চোখে পড়ে না। বার্ষিক ওরষ শুরু হলে দুই/একজন হাওয়াই ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা দেখা যায়।কি দিয়ে তৈরি করা হয় হাওয়াই মিঠাই? হাওয়াই মিঠাই দেখতে তুলার মতো আর মিষ্টি।মুখে দিলে তা গলে যায়। এটি তৈরিতে চিনি আর রং ব্যবহার করা হয়। হাওয়াই মিঠাই বানানোর জন্য বাক্সের মধ্যে একটি চাকতি থাকে যা খুব দ্রুত ঘুরে। এই চাকতিটিকে বৈদ্যুতিক বা ভিন্ন কোনো উপায়ে উত্তপ্ত করা হয় যাতে তা গরম হয়। পরে এই গরম চাকতিতে চিনি ঢেলে দেওয়া হয়। সে চিনি গলে আঠালো হয়ে যায়। পরে চাকতির সরু ছিদ্র দিয়ে সুতার মতো বের হয়ে জমাট বাধাতে থাকে। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে সুতাগুলোকে কাটিতে পেছিয়ে প্যাকেট করে ফেলা হয়। কারণ তা না হলে বাতাসের জলীয় বাষ্পে চিনি দ্রবীভ’ত হতে পারে। এভাবেই তৈরি হয় হাওয়াই মিঠাই।