দিন বদলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ যুব সমাজের বেকারত্বকে পুঁজি করে ভুয়া ট্রেনিং সেন্টারের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পদের ডাক্তারী সার্টিফিকেটের জন্য এখন আর পড়ালেখার প্রয়োজন নেই। টাকা দিলেই কোনো ঝামেলা ছাড়া অনায়াশেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের জাল ডাক্তারি সার্টিফিকেট। কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা (কোলা রোডের) পশ্চিম পাশে জাল সার্টিফিকেট তৈরির সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য এখন চরমে। প্রতিদিনই চলছে এ অবৈধ কর্মকান্ড। এ চক্ররা ভোয়া ডাক্তারী ২৫ পদের সার্টিফিকেটর পাশাপাশি বিভিন্ন অশিক্ষিত-শিক্ষিতদের কাছ থেকে প্রশিক্ষনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কালীগঞ্জের লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং ইনিস্টিউট সোসাইটি পরিচালিত একটি আধুনিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র নামের এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি দিনের পর দিন এসব কর্মকান্ড
চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক হোমিওপ্যাথি ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ফয়লা (কোলা রোড) এর পশ্চিম পাশে তার তিন তলা ভবনে দীর্ঘদিন ধরে এই সার্টিফিকেটের রমরমা ব্যবসা করে আসছেন। শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানটির সরকারি ভূষণ হাইস্কুলের পুকুর পাড়ে করা হয়েছিল। বর্তমানে নিজ জমিতে নিজস্ব ভবনে ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরোজমিনে "লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং ইনিস্টিউটে" ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর প্রতিষ্ঠানটির কোন বৈধ কাগজ-পত্র দেখাতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানে ঢোকার সাথে সাথে নিচ তলার একটি রুম ও দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং ছবি তুলতেও নিষেধ করেন।
এব্যপারে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতেও নারাজ। তিনি বলেন, ছবি ও ভিডিও করে কোন লাভ হবে না। তার কারণ আমার প্রতিষ্ঠান ও আমার নামে অনেক নিউজ হয়েছে কেউ কিছুই করতে পারিনি আর পারবেও না।
রাজীব কিশোর আরো বলেন,আমার পরিচয়টা দিতে চাচ্ছি না। আমি সবাইকে ম্যনেজ করেই চলি। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস ও আমি মেন্টেইন করে চলি। এই প্রতিষ্ঠান কোন কোন ডাক্তার দ্বারা প্রশিক্ষন দেওয়া হয় জানতে চাইলেও তিনি বলেন না। ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর হোমিওপ্যাথ ডি এইচ এম এস (ঢাকা) এই কোর্স করে তার ব্যবস্থাপনাপত্রে ডাঃ লেখার নিয়ম আছে কি না জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার লেখা নিয়ম আছে। আমি কোলকাতা থেকে ৭ দিনের কোর্স করে এসেছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলমগীর হোসেন বলেন, ভুয়া ডাক্তারের সনদ প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান কথা আমি শুনেছি। খুব দ্রুত ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন সুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন,এই প্রতিষ্ঠানের নাম আজই শুনলাম। খবর নিবো এবং তথ্য সঠিক হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ডি এম এফ ও ডি এইচ এম এস কোর্স করা ডিপ্লোমা ধারীরা ব্যবস্থাপনাপত্রে ডাক্তার লেখতে পারবে কি না জানাতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরা তাদের ব্যবস্থাপাপত্রে ডাক্তার লেখতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ডাঃ বিশ্বাস রাজিব কিশোরের বিরুদ্ধে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি নাকের পলিপ অপারেশন করার অভিযোগ রয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হয়ে তিনি কিভাবে সার্জারি করেন ? শুধু তাই নয় তার এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলাতে চালু করার কিছুদিনের মধ্যেই সেখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রেশেদ আল মামুন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেন। অনুরূপ ভাবে কালীগঞ্জেও ভুয়া এই প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ ডাঃ রাজীবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এমনটিই প্রত্যাশা করেন সাধারণ জনগন।