লোডশেডিং মূক্ত দক্ষিণাঞ্চলে ত্রুটিপূর্ণ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় লাখ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বিদ্যুৎ নিয়ে দিনরাত নানামুখী যন্ত্রনায় জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি প্রচন্ড গরমে গত দুইদিনে বরিশালের অসংখ্য খামারের মুরগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলা সদর ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যুত বিভাগের দূর্বল বিতরণ ও সরবারহ ব্যবস্থায় ভোগান্তিতে পরেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো জাতীয় গ্রীডে যুক্ত না হওয়ায় উৎপাদিত সিমিত বিদ্যুতের সমুদয়ই পশ্চিম জোনে বিতরনের ফলে লোডশেডিংয়ের বাহিরে থেকেও বিড়ম্বনার কোন শেষ নেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুত গ্রাহকদের। গত প্রায় এক মাস ধরে রাত আটটার পরে সরকারী নির্দেশে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পরেও বিদ্যুত নিয়ে ভোগান্তি কমছেই না। সময় নির্ধারন করা না থাকলেও বিদ্যুত বিভ্রাট কখনও একটানা দুই থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত চলছে। এভাবে ২৪ ঘন্টায় অসংখ্যবার বিদ্যুত আসা-যাওয়ার খেলায় এখন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে।
সূত্রমতে, আকাশে মেঘ জমলেই বরিশাল নগরীসহ উপজেলা পর্যাযে বিদ্যুৎ চলে যায়। এবারের আষাঢ় ও শ্রাবনের দুঃসহ গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট গ্রাহকদের দূর্ভোগের চরম সীমা অতিক্রম করেছে। বরিশাল মহানগরীর মতো পটুয়াাখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠী শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দিন-রাত মিলিয়ে এখন
গরমের সাথে পাল্টা দিয়ে লোডশেডিং ॥ গত তিনদিনের প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্টা দিয়ে বেড়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। একটানা ২/৩ ঘন্টা বিদ্যুত না থানায় প্রচন্ড গরমে হিটস্টোক করে বরিশালের অসংখ্য খামারের ডিম পারা মুরগি মারা গেছে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের খামারী রহিম সাবু বলেন, প্রচন্ড গরমের সাথে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে একে একে তার খামারের প্রায় শতাধিক ডিম পারা মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
মুরগিগুলো চোখের সামনে একে একে মারা গেছে মন্তব্য করে একই গ্রামের অপর খামার মালিক আবুল কালাম বলেন, বর্ধিত মূল্যে মুরগির খাবার খাইয়ে মুরগিগুলো লালন-পালন করেছি। এখন সব মুরগিতে ডিম এসেছে। এরইমধ্যে গত তিনদিন (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার) প্রচন্ড গরম পরে। পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পরে পুরো এলাকা। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুতের জন্য অসংখ্যবার ফোন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। অবশেষে প্রচন্ড গরমে ওই তিনদিনে হিটস্টোক করে তার খামারের প্রায় অর্ধশত মুরগী মারা গেছে। খামারি রাসেল সরদার বলেন, প্রচন্ড গরমের মধ্যে যদি একটানা এত লোডশেডিং হয় তাহলে কীভাবে চলে? গরম থেকে বাঁচানোর জন্য খামারের ভেতরে বড় ফ্যান ছিল কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলো চালানো যায়নি। ফলে কেবল একটানা দীর্ঘসময় লোডশেডিংয়ের কারণে আমার খামারের প্রায় অর্ধশত মুরগি মারা গেছে।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত তিনদিন জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ ফেল করেছিল। আমরা চাহিদার তুলনায় কেবল ৪৪ শতাংশ বিদ্যুৎ পেয়েছি। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, তীব্র গরমে শুধু মুরগী নয়, গরু-ছাগল, হাঁস, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণীরও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এতে খামারীদের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, খামারী যদি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকেন আর প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন, তাহলে তাদের (খামারী) আমরা সরকারী অনুদান পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবো।