ঘুষ আর হয়রাণির বেড়াজালে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন পীরগাছা উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। দক্ষ ও সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে মিটাররিডার, লাইনম্যান ও অফিসের কর্মচারীদের নানা হয়রানিতে নাজেহাল উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক। ডিজিএম এর স্বাক্ষর নিতেও দিতে হচ্ছে ঘুষ। টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসের মিটাররিডার, লাইনম্যান ও কর্মচারীরা। নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্দে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের হয়রানির শিকার হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করছেন এক প্রতিবন্ধী ভ্যান চালক।
জানা গেছে, রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুরুজ্জামান মিয়া এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম-দুণীতি জড়িয়ে পড়ছেন মিটাররিডার, লাইনম্যান ও কর্মচারীরা। কেউ শুনছেন না কারো কথা। ডিজিএমএর বিরুদ্ধেও অফিসে আসা গ্রাহকদের অশালীন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। মিটাররিডাররা গ্রাহকদের বাড়ি না গিয়ে নিজের ইচ্ছামত লিখে দিচ্ছে রিডিং। এতে করে বিল পাওয়ার পর গ্রাহকরা অফিসের গিয়ে হচ্ছেন লাঞ্চিত। অফিসের কর্মচারীরা নিজেদের গাঁ বাচাতে গ্রাহকদের পাঠাচ্ছেন এ টেবিল থেকে ও টেবিলে। কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে দিচ্ছেন লাইন কাটার হুমকি। গ্রাহক সেবার নামে হয়রানির বেড়াজালে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ছেন এ উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। তেমনি ৪দিন বিদ্যুৎ বিহীন অবর্ণণীয় দুর্ভোগে থাকা এক প্রতিবন্ধী উপজেলার তালুক ইসাদ ফকিরটারী গ্রামের শরিফুল ইসলাম। অন্যের জমিতে থাকতেন। সম্প্রতি এলাকার এক ব্যক্তি তাকে জমি দান করলে সেখানে একটি বাড়ি করেন। তার আগের বসবাসস্থলে থাকা নিজ নামে মিটারটি সরাতে পরামর্শ চাইলে কৌশিক ও ফারুক নামে দুই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তার নিকট থেকে ৬শ টাকা নিয়ে মিটারটি খুলে নিজ বাড়িতে লাগিয়ে দেন এবং নিজেরা অফিস ফি দিবেন বলেন জানান। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ৫শ টাকা ঘুষ দাবি করেন ওই এলাকার মিটাররিডার রবিউল ইসলাম। এ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হুমকি-ধামকির পর অভিযোগ করে খুলে আনা হয় ওই মিটারটি। ওইদিন টাকার জন্য রাত পর্যন্ত চলে দেনদরবার। পরে গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো বিহীন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুর্ভোগে কাটান ওই প্রতিবন্ধী। রোববার বিদ্যুৎ অফিসের গিয়ে তাকে গুনতে হয় ১৩৫০ টাকা। সব কাগজপত্র রেডি করে ডিজিএমএর স্বাক্ষর নিতে গেলে ঘটে বিপত্তি। ১০০ টাকা ঘুষ ছাড়া কাগজ উপরে যাবে না বলে জানান কর্মচারী আবদুল মান্নান। পরে এক সাংবাদিকের সহায়তায় পূর্ণ সংযোগ দেয়া হয় ওই প্রতিবন্ধীর মিটারটি। এর ধরনের নানা অনিয়মে জর্জরিত পীরগাছা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। তবুও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপেেক্ষর।
গ্রাহক নজরুল ইসলাম, আজাদ সরকার, আবদুস সামাদ বলেন, অনেক মিটাররিডার, লাইনম্যান ও কর্মচারী দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় তারা দুনীতিতে বেশ দক্ষ হয়ে পড়ছেন। অনেকে কিছুদিনের জন্য বদলী হয়ে গেলেও আবার ফিরে আসছেন পীরগাছা অফিসে। আর ওয়ারিং অফিসারের সাথে যোগসাজসে ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরাও এখন আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয়েছেন।
প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ করায় মিটাররিডার রবিউল ইসলাম হুমকি দিচ্ছেন। তার দাবি টাকা দিলে এ রকম হতো না। যেখানে স্বাক্ষর নিতে ১০০ টাকা দাবি করে। সে অফিসে কি অবস্থা গ্রাহকের তা যারা আসেন তারা বোঝেন।
অভিযুক্ত মিটাররিডার রবিউল ইসলাম বলেন, টাকা চাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। নিয়ম না মানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসের ডিজিএম নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, ওই প্রতিবন্ধীর সংযোগ চালু করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।