কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ক্ষতিকর তামাক চাষেই কৃষকদের বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে কখনো কম আবার কখনো বেশি তামাকের চাষ হচ্ছে এখানে। তামাক কোম্পানিগুলোর আচরণের ওপর এর চাষ ওঠানামা করে। এ উপজেলায় কেবল সরকারি হিসেবেই চলতি বছর তামাক চাষ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এসব জমি অন্যান্য ফসলের জন্যেও ঊর্বর। বিভিন্ন তামাক কোস্পানির দেয়া নানা ধরনের সহযোগিতা কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে তামাককেই লাভজনক হিসেবে মনে করছেন কৃষকরা।
কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, দৌলতপুর উপজেলায় বর্তমানে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর। এসব জমিতে সাধারণত ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ চাষ হয়। আর খানিকটা বৈচিত্রতা রয়েছে এখানকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের আবাদি জমিগুলোতে। সেসব জায়গায় চিনাবাদাম, মিষ্টি আলু ও কলাইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ফলানো হয়। তবে পুরো উপজেলাজুড়ে তামাক চাষের প্রবণতা সংশ্লিষ্টদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও তামাকের পাশাপাশি এই মৌসুমে আমন চাষেও কৃষকদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। এদিকে রবি মৌসুমের (তামাক চাষের একই মৌসুম) বিভিন্ন ফসল চাষের প্রতি কৃষকদের আরো আগ্রহ বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে কৃষি দপ্তর।
কৃষি সংশ্লিষ্ট সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, তামাক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় এখানকার ফসলের মাঠে প্রতিবছরই ব্যাপকহারে ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপেও খুব একটা কমছে না তামাকের চাষ। উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুসারে, গেল দুই বছরে তামাক চাষের পরিমাণ কমেছে মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে। যেখানে বিগত সময়ে তামাক চাষ কমেছিল আরো অনেক বেশি। অন্যান্য বছরে তামাক চাষের পরিমাণ ১শ হেক্টরের বেশি কমে আসার রেকর্ড রয়েছে। তবে চলতি বছরে উপজেলায় সরকারি হিসেবেই বিভিন্ন প্রজাতির তামাক চাষ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উন্নত জাতের কেটু তামাকই বেশি রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আবাদি জমিতে চোখ মেললেই দেখা মিলবে তামাক ক্ষেতের ব্যাপকতা।
জানা গেছে, তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে কৃষকদের নানা উপকরণসহ আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পাশাপাশি কৃষকদের তামাক চাষে আগ্রহ ধরে রাখতেও নানাভাবে কাজ করছে তারা। মূলত তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্ররোচনায় কৃষকরা তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তবে তামাক কেনার ক্ষেত্রে ওইসব তামাক কোম্পানিরই আবার বিমাতাসুলভ আচরণে বিড়ম্বণার শিকার হতে হয় কৃষকদের। তারপরেও তারা তামাক চাষ থেকে মুখ ফেরাতে পারছেন না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তামাক চাষের কারণে ফসলের মাঠে খাদ্যপণ্য উৎপাদন কমে গেছে। তামাক জমির ঊর্বরতাও কমিয়ে দেয়। এ উপজেলায় তামাক চাষের এই প্রসার কৃষিক্ষেত্রের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। সামনের মৌসুমেও তামাক চাষের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে আগামী মৌসুমে তামাক চাষের প্রবণতা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কৃষকরা তামাক চাষে খুব বেশি লাভবান না হলেও পরিবারের সবাই তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করতে পারেন। এতে শ্রমিক খাতে ব্যয় কমে যায়। তিনি জানান, তামাকের পাশাপাশি আমন চাষেও কৃষকদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। ইতোমধ্যে আমন ধান রোপন করা হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল যেমন- গম, ভুট্টা, মশুর, সরিষা, সূর্যমুখী, পেঁয়াজ, রসুন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।