যশোরের মণিরামপুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারী অংশে সুযোগ সুবিধা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের টাকা দিয়েও পার পাওয়া যাচ্ছেনা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন এসব সুবিধা নিতে একাধিক কর্মাকর্তাকে তুষ্টি করতে পারলেই তবেই পার পাওয়া সম্ভব।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানাযায়, সরকার সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি উচ্চতর স্কেল দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় থেকে। বিধি অনুযায়ী এ স্কেল পাওয়ার দাবীদার শিক্ষক কর্মচারীরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দাখিল করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে চলতি মাসের ৮ তারিখের আগে মণিরামপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কাগজপত্র গ্রহন করেন। এছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষকরাও রয়েছেন শতাধিক।
একাধিক সূত্র জানায়, এসব সুবিধা গ্রহন করতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষককে এ অফিসে গুনতে হয়েছে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিকট থেকে উৎকোচ হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে ৪ হাজার করে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, উচ্চতর এ স্কেল গ্রহনের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষককের বেতন বৃদ্ধি হবে প্রায় ১২’শ টাকা। আর কর্মচারীদের ৫০ থেকে ১৫০ টাকা করে বাড়বে বলে জানাগেছে।
এই স্কেল পাইতে শিক্ষক কর্মচারীরা যথা সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করলেও মাঝ পথে বিপত্তি ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্রকে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে পার পেলেও যশোর জেলা শিক্ষা অফিসে তা উড়িয়ে দিয়েছে। জানাগেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই পূর্বক যশোর জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর প্রেরণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ না দেওয়ায় মাধ্যমিক অফিসের দেওয়া ফাইলগুলো ফেরত দিয়েছে। তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অফিস সহকারী সাজ্জাত হোসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একজন জানান, জেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী সাজ্জাত হোসেনকে যারাই খুশি করতে পেরেছেন তাদের ফাইল কেবল উপ-পরিচালক খুলনার কার্যালয়ে পৌছিয়েছে। এই সূত্রটি দাবী করেছে মাধ্যমিক স্তরের দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর ফাইল এ অফিস থেকে পাঠানো হলেও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ৫০টির মতো ফাইল পার হয়েছে। বাকি দেড় শতাধিক ফাইল ফেরত দিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।
এদিকে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১১ জন, শ্যামকুড় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৩ জন, গোপীকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৪ জন, জিএইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী স্কেল পরিবর্তন চেয়ে কাগজপত্র পাঠালেও কেবলমাত্র জেলা শিক্ষা অফিস থেকে দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ফাইল যশোর অফিস পার করতে সক্ষম হয়েছেন।
দিঘিরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও কেবলমাত্র চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীর কাগজপত্র বৈধ দেখিয়ে বাকি ৫টি বাতিল করা হয়েছে। হাজরাকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কওসার আলী জানিয়েছেন, তার স্কুল থেকে ৫ জনের কাগজপত্র পাঠানো হলেও যোগাযোগ না রাখায় সবগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভের সাথে এ প্রধান শিক্ষক বলেন, সামান্য কিছু টাকা বৃদ্ধির জন্য ঘাটে ঘাটে টাকা দেওয়াটাও কঠিন শিক্ষকদের জন্য। ধলীগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, মণিরামপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এখন দূনীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এ অফিস থেকে ঘুষ ছাড়া কেউ কাজ করাতে পারবেননা বলে এমন অবস্থা বিরাজ করছে।
জানাগেছে, এ উপজেলার ১১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উচ্চতর এ স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে কাগজপত্র প্রস্তুত করলেও দিশেহারা অফিস কর্তাদের কর্মকান্ডে। এ ছাড়া ৬৪টি মাদ্রাসার দু’শতাধিক সহকারী মৌলভি স্কেল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেনদরবার করে চলেছেন সংশ্লিষ্টদের নিকটে। কিন্তু টাকা ছাড়াই কোথাও ফাইল নড়ছেনা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
গোপীকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, কাগজপত্র দিয়েও টাকা দিতে পারিনি তাই ফাইল ব্যাক দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার টাকা বৃদ্ধির জন্য জেলা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাড়ি কাড়ি টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই বিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধি শিক্ষক ইমরান আলী আগামী নভেম্বরে অবসরে যাবেন। কিন্তু শেষ স্কেলটি নিয়ে যাওয়ার আশায় অফিসে কাগজপত্র জমা দিলেও টাকা দিতে না পারায় তার ফাইলটিও ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যাদের আগের ৪টি এমপিও’র কাগজপত্র পূর্নাঙ্গভাবে জমা দিতে পারেননি তাদেরটাই কেবল ফেরত এসেছে।
এসব ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা শিক্ষা একেএম গোলাম আযম জানান, যে সকল ফাইল ফেরত দেওয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র ভুল ভ্রান্তির জন্য। তাছাড়া ফাইল সঠিক না থাকলে অফিসে কাউকে টাকা দিয়ে লাভ নেই।