রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও লংগদু উপজেলার সীমান্তবর্তী কাট্টলীর ত্রিপুরাছড়া এলাকায় আঞ্চলিক দুটি গ্রুপ সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ও প্রসীত বিকাশ নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ইউপিডিএফের ৬জন নিহত হওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
তবে ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্য মারমা তাদের একজন সক্রিয় কর্মীকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মীর নাম শ্যামল চাকমা (৪৫) নিশ্চিত করা হলেও তার ঠিকানা সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানাতে পারেনি। আর বাকি লাশের বিষয়ে তাঁর দল কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান। এই ঘটনার জন্য সংগঠনটি সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকে দায়ী করছেন।
জনসংহতি সমিতির লংগদু শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, মঙ্গলবার সেখানে রাতে কিছু সময় গোলাগুলি হয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। কাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে এবং গুলিতে কেউ মারা গেছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। ওই এলাকাটি ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে জানান তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে গোলাগুলির খবর জানার পর বুধবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। দূর্গমতার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর তারা ঘটনাস্থলে কোন লাশ পায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
লংগদু ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাধন কুমার চাকমা বলেন, ঘটনা জানার পর বুধবার সকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিমের সাথে ঘটনাস্থলে যাই। এলাকাটি খুবই দুর্গম, প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা হাঁটার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রচুর গুলির খোসা, রক্তের দাগ ও ছড়ার পাশ থেকে একটি ব্যাগে কিছু পোশাক পাওয়া যায়। তবে দুই-তিন জায়গায় ব্রাশফায়ার হয়েছে এমন আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলের বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুজির পরও কোন লাশ খুঁজে পাইনি আমরা।
লংগদু থানার ওসি তদন্ত মো. সানজিদ আহমেদ বলেন, জেএসএস-ইউপিডিএফ আঞ্চলিক দুই গ্রুপের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকঘন্টার বিভিন্ন জায়গায় তদন্ত শেষে আমরা পাহাড় থেকে নেমে এসেছি। হত্যা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা সংখ্যার কথা শোনা গেলেও আমরা সেখানে কোন লাশ পাইনি, তাই হতাহতের সংখ্যার কথা বলা সম্ভব নয়।
এদিকে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহমুদা আক্তার বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় জানান, ঘটনাস্থল দূর্গম হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টিম পৌঁছতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজির করেও তারা কোন নিহতের লাশ না পেয়ে অভিযান শেষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফেরত এসেছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার ভোর থেকেই ইউপিডিএফ বিরোধী জেএসএস এর কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের ফেসবুক পেইজে কাট্টলীতে রাতের অপারেশনে ইউপিডিএফ এর ৬ সন্ত্রাসীকে হত্যা ও ঘটনাস্থল থেকে দুইটি একে-৪৭ রাইফেল লুট করে নিজেদের কব্জায় নিয়েছে বলে ফেসবুকে অস্ত্রের ছবি ও তথ্যাদির প্রচার প্রচারনা চালালেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো রকম সত্যতা দিতে পারেনি কেউ।
এদিকে, রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার ছোট কাট্টলি এলাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএসের গুলিবিনিময়ে ৬জন নিহতের ঘটনাটি গনমাধ্যমে যে ভাবে প্রচারিত হলো তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। তারা এইসব ফেক নিউজ ও পার্বত্য এলাকাকে অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি হয় এমন সংবাদ প্রচারে বিরত থাকার আহবান জানান।