বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্রায় সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই এসব সিন্ডিকেট সক্রিয়। সম্প্রতি ডিমের দাম নিয়ে এসব সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম আমরা দেখেছি। এসবের মধ্যে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যমূল্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সম্প্রতি জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর চালের দাম আরও লাগামহীন হয়ে পড়েছে। জ¦ালানির দাম বাড়ার আগে থেকেই চালের মূল্য কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছিল। আর জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। অথচ পরিবহণ ব্যয়বৃদ্ধির বিষয়টি হিসাবে নিলে চালের দাম বাড়তে পারে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা। মজার বিষয় হলো, চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে অভিযোগের আঙুল উঠছে মূলত মিলারদের দিকে। আর মিল পর্যায়ে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয়ের প্রশ্ন ওঠে না। তাছাড়া বাজারে কোনো ঘাটতিও নেই; বরং বর্তমানে চাহিদার তুলনায় চালের মজুত ও সরবরাহ বেশি বলে জানা গেছে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, নানা অজুহাতে কারসাজি করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে চালের দাম। এটি প্রতিরোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে। চাল এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। মানুষ তার মোট আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করে খাদ্য খাতে। এর মধ্যে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কাজেই চালের দামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে মানুষের জীবনমান। এ অবস্থায় চাল নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি চলতে দেওয়া উচিত নয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এ অভিযান শুধু খুচরা বাজারে চালালে হবে না। অভিযান চালাতে হবে মিল পর্যায়েও। কেবল বাজার মনিটর করলেই হবে না, মিল পর্যায়েও মনিটরিং জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অথচ সরকারের একাধিক সংস্থা এদের তালিকা করে উচ্চপর্যায়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। চালের বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতি নমনীয়তা কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অসহনীয় কষ্টে আছে। সয়াবিন তেল, আটা-ময়দা, মাছ-মাংস, শাকসবজিসহ প্রতিটি পণ্য কিনতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বাজার সিন্ডিকেট। চাল, ডিম, সয়াবিন তেল-সব পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রেই মানুষ সিন্ডিকেটের উপস্থিতি টের পাচ্ছে। অথচ এই অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। এটি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা বলে মনে করে মানুষ। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাজারের নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের কবল থেকে উদ্ধার করতে সরকারকে যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে।