শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে এবার পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা গবেষণায় ইন্সটিটিউট খোলা হচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট। বাংলাদেশে এ জাতীয় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটাই প্রথম। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রাজশাহী নগরীর তের খাদিয়া এলাকায় ১৯ বিঘা জমির ওপর ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় এ ইন্সটিটিউট নির্মাণ করছে। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর এ ইন্সটিটিউটের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং এখন সমাপ্তির পথে। এখন শেষ মহুর্তেও ফিনিশিং ওয়ার্ক চলছে। শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় এ ইন্সটিটিউটে রয়েছে ছ’ তলা বিশিষ্ট নটি সুদৃশ্য ভবন। যেখানে থাকবে গবেষণা ল্যাব, শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি, সেমিনার হল, প্রশিক্ষণ ভবন, প্রশিক্ষণার্থী নারী পুরুষদের জন্য পৃথক হোস্টেল ,একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষর বাংলো ও কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন। অ্যাকাডেমি ভবনটি চার তলা আর পুরুষ ও নারীদের হোস্টেল, টিচার্স কোয়াটার, ব্যাটেলর কোয়াটার, ফ্যামিলিটি কোয়াটার, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ভবন হচ্ছে ছ’তলা।
বাংলাদেশের শিল্প কানখানা গুলোর কর্ম-পরিবেশ শোভন নয়, সেখানে নেই পর্যাপ্ত শ্রমিক নিরাপত্তা। এজন্য প্রায়শই শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। রানা প্লাজার ধসে সহ¯্রাধিক মানুষের প্রানহানী এবং আরো ততোধিক মানুষের পঙ্গুত্ব বরন বিশ^বাসীকে নাড়া দিয়েছে। তার আগের বছর তাজনীন ফ্যাশনের অগ্নিকা-ে শতাধিক প্রানহানীর ঘটনা এখনো সবাইকে পীড়া দেয়। এরপর অবশ্য বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্টসেই পরিবেশ সম্মত নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সচেতনতা বাড়াতে মালিক শ্রমিকদের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার সংগঠন গুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এতদিন অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন নি।
শেষ পর্যন্ত দেরিতে হলেও নিরাপদ ও শোভন কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে, দুর্ঘটনা হ্রাস করতে, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করা সহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পেশাগত স্বাস্থ্যও নিরাপত্তা গবেষণায় ইন্সটিটিউট স্থাপনের খবর নি:সন্দে প্রশংসনীয়। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো গবেষণা দেখা যায় না। তবে ইন্সটিটিউট চালু হলে এখানে গবেষণা করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও শ্রমিক মালিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব হবে। তা ছাড়া কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির পথও প্রশস্ত হবে। তাই আশা করা যায় এ ইন্সটিটিউট কার্যক্রম শুরু হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে। সেই সাথে এ জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গড়া যেতে পারে।