ভাদ্র মাসে চৈত্রের খরা। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। বর্ষার শেষে আবাদি জমিতে বৃষ্টির পানিতে কৃষক আমন ধান রোপন করে স্বাচ্ছন্দে, পানির অভাব খুব একটা অনুভুত হয় না, এবার দ্রুত পানি সরে যাওয়ায় এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষক। প্রকৃতির এ বৈরী আচরণে জমিগুলোতে নাই পানি, নাই বৃষ্টিপাত। অন্যদিকে সার, ডিজেলের উচ্চ মূল্য এবং বিদ্যুতের অসহনীয় লোড শেডিং এর কারণে কৃষক হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। এক বিঘা জমিতে আমন রোপনে যে খরচ হতো এবার খরচ বেড়ে গিয়েছে তুলনা মূলক অনেক বেশী। তারপরও উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষক। উৎপাদন আশানুরূপ না হলে খাদ্য ঘাটতিও দেখা দিতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৮৬৫হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকী জমিতেও চারা রোপনের কাজ সম্পন্ন হবে। উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫৫২ মে.টন ধান।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পৌর এলাকা ও ৯টি ইউনিয়নের রোপিত আমনের জমি ফেটে চৌচির। বাকী জমিগুলোতে বর্তমানে পানির অভাবে আবাদ করা যাচ্ছে না। পানির অভাবে রোপিত চারা জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেচ দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন কৃষক। কিন্তু অব্যাহত লোড শেডিং এর কারণে সময়মত সেচও দিতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সেচ খরচও বেড়ে গেছে অনেকাংশ। তারপরও দু-তিন দিন পর পর সেচ দিলেও প্রখর রোদের কারণে ফসলী মাঠে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। মাটি ফেটে ফসলী মাঠ চৌচির হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে আমন আবাদ। প্রতিকুল পরিবেশ যদি অব্যাহত থাকে তবে উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা মারাত্মক ভাবে ব্যহত হতে পারে।
চান্দপুর মানিকখালী এলাকার মুর্শেদ খান বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি। সার, ডিজেল, শ্রম সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। হাল চাষ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়ে যাবে ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলে কিছুটা পুষিয়ে যাবে। কিন্তু উৎপাদন আশানুরূপ না হলে খরচ উঠে না আসার সম্ভাবনাই বেশী। সব কিছু মিলিয়ে আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
জালালপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের হান্নান ভূইয়া জানান, অত্র ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন যাবত কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা আসেন না বা কৃষকদের কোন খোঁজ খবরও নেন না। ফলে এলাকার কৃষক বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে কি করনীয় বুঝতে পারছেন না। একই ওয়ার্ডের কৃষক মোহন মিয়া, মোহাম্মদ জানান, রোপিত চারা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও কুল কিনারা করতে পারছি না। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আশানুরূপ ফলন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
কটিয়াদী পৌর এলাকার চরিয়াকোনা গ্রামের হাবি মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছি। প্রতিকুল পরিবেশে খরচ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ ফলন না হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
পৌর এলাকার বীরনোয়াকান্দি গ্রামের আবুল মুনছুর আহমেদ বলেন, চার বিঘা জমিতে আমন রোপন করেছি আজ ২০-২২ দিন হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে জমিতে প্রচুর ঘাস জন্মেছে, কিন্তু নিরানী দেয়ার ব্যবস্থা পাচ্ছি না। সেচ দিয়েও নিরানী দেয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে জমিতে ফলন উপযোগিতা নষ্ট হয়ে যাবে। এক তৃতীয়াংশ ফলন ঘরে উঠবে কি না এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুকশেদুল হক বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। তাই আবাদ যাতে বিঘিœত না হয় সেজন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম এর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সেচ সুবিধা বজায় রাখার জন্য মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি সেচের ঘাটতি পূরনের জন্য কৃষকদের সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে।