সৈয়দপুর হল প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। আর এ পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র হলেন রাফিকা আকতার জাহান বেবী। নৌকা মার্কা নিয়ে বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর মরহুম স্বামী আখতার হোসেন বাদল চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী রশিদুল হককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর সহধর্মিনী রাফিকা আকতার জাহান বেবীও বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে অবাক করে দিলেন সৈয়দপুরবাসীকে।
একান্ত সাক্ষাতে তিনি বলেন,আমি জনগনের সেবা করতে এসেছি। জনগন যে আশা নিয়ে আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন আমি তাদের সে আশা যাতে পুরণ করতে পারি এ দোয়া চাই সকলের কাছে। আমি পৌরবাসীর সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। আর এজন্য সবার সহযোগিতা আমার বড় প্রয়োজন।
আমার দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দেড় বছর হচ্ছে। এর মধ্যে আমি শহরকে সর্বক্ষণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ প্রদান করেছি। মহল্লার রাস্তাগুলোর কাজ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক মহল্লার রাস্তার কাজ করা হবে। জন্ম নিবন্ধন কাজ এখন অনেকটা সহজ করা হয়েছে।
এখন আর ভোগান্তি পোহাতে হয় না পৌরবাসীকে।
বাসটার্মিনালের সংস্কার কাজ করতে প্রায় ২৭ কোটি টাকার প্রয়োজন। এ বিরাট অংকের টাকা পৌরসভায় নেই। তারপরও আমি চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব বাসটার্মিনালের কাজ করতে। আপাতত টার্মিনালটি সংস্কার করতে আমি ৪ লাখ টাকা দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। কেন কাজ হল না তা আমি খতিয়ে দেখছি।
ইতিপুর্বে পৌরসভার কর্মচারী কর্মকর্তারা বেতন ভাতা পেত না। বেতন ভাতার জন্য তারা আন্দোলন করতো। আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে তাদের বেতন ভাতা চালু করেছি নিয়মিত। সকলকে সতর্ক করেছি অনিয়ম দুর্নীতি থেকে সড়ে দাঁড়াতে।
রংপুর বিভাগের মধ্যে শিল্প সমৃদ্ধ ও বাণিজ্যিক শহর হল সৈয়দপুর। সৈয়দপুর পৌরসভাটি রংপুর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এ পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। ভোটার সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি। দেশের উপজেলা শহর পৌরসভার মধ্যে এটি অত্যন্ত ঘনবসতি। চার লাখেরও বেশি এ পৌরসভার অধিবাসী। কয়েকযুগ আগে এটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা পেয়েছে। বর্তমানে সৈয়দপুর পৌরসভার বয়স চলছে ৬৩ বছর। জেলা না হলেও জেলার অনেক সরকারি বেসরকারি দপ্তর আছে সৈয়দপুরে। দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা এ শহরে। আরও রয়েছে রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়। সৈয়দপুরে রয়েছে আঞ্চলিক বিমানবন্দর। বিগ্রেড সমান সেনানিবাস। বিসিক শিল্প নগরী। বিশিক নৈপুর্ণ্য বিকাশ কেন্দ্র। সৈয়দপুরে রয়েছে জেলার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, পাউবো অফিস, পরিবহন মালিক ও মাইক্রো,পিকআপ,কার মালিক সমিতির কার্যালয়।
এ শহরের অদূরে রয়েছে উত্তরা ইপিজেড, ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল।
মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী বলেন, বাজারের রাস্তায় কোন ময়লা যাতে না পড়ে সেজন্য প্রতিটি দোকানের সামনে থাকবে বক্স ডাস্টবিন, আর ডাস্টবিনের পাশে থাকবে গাছের টপ। ব্যবসায়ীরা দোকানের ময়লা রাস্তায় না ফেলে বক্স ডাস্টবিনে রাখবে। সময়মত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তা নিয়ে এসে রাখবে আবর্জনাবাহী গাড়িতে। গাছ থেকে ব্যবসায়ীরা পাবে বিশুদ্ধ বাতাস। শহরকে জলজট মুক্ত করতে ব্যাকবোন ড্রেনকে করা হবে আধুনিক। পরিস্কার করা হবে হাজামজা পুকুর। এতে করে বৃষ্টি ও গৃহস্থালী পানি সহজে এসে গড়াবে ড্রেন ও পুকুরে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি দ্রুত শহর থেকে সরাতে সেচযন্ত্রও ব্যবহার করা হবে। দেশি ও বিদেশি বিশিষ্টজনদের চলাচলে সুপ্রশস্ত থাকবে সড়ক। এজন্য প্রয়োজনে অবৈধ স্থাপনা করা হবে উচ্ছেদ। রাত্রিকালিন শহরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিমানবন্দর থেকে ওয়াপদা মোড়, বঙ্গবন্ধু চত্তর থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, শহীদ ডা. শামসুল হক সড়ক, মদিনা হোটেল থেকে খড়খড়িয়া সাকো পর্যন্ত করা হবে আলোক উজ্জল। যাতে দেশি ও বিদেশি অতিথিরা শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীর আবহ পান।
শিশুদের বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হবে আধুনিকমানের শিশুপার্ক। কোন নাগরিক যাতে সরাসরি ড্রেনে ময়লা না ফেলে এবং পায়খানার সংযোগ ড্রেনে না দেয় সেজন্য নাগরিক সংলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যেসব বাসাবাড়িতে ময়লা ট্যাংক রয়েছে সেইসব নাগরিকদের ট্যাংকের ময়লা ভেকু ট্যাংকের মাধ্যমে অপসারণ করতে নেয়া হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা। এছাড়াও গৃহস্থালি আবর্জনা সরাসরি ডাস্টবিনে ফেলার জন্য নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের উদ্যোগ থাকবে। পাড়া মহল্লায় পথচারি ও ছোট যান চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি না হয় সেই জন্য নাগরিকদের বিল্ডিংকোড মানার জন্য সকল ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা হবে। একই সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ত্রাণ সাধারণ গরীব দুঃখী মানুষ যাতে পায় সে ব্যাপারে করা হবে কঠোর নজরদারি। তাছাড়াও আধুনিক পৌর সবজি বাজারকে নতুন উদ্যামে নতুন মানে গড়ে তোলা হবে। এ বাজারের নাম হবে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মেয়র আখতার হোসেন বাদলের নামে। সাধারণ মানুষ বাজার করতে গিয়ে কোনভাবেই যেন বিড়ম্বনার শিকার না হন সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। এক কথায় স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়তে সকলপ্রকার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মেয়র বলেন রাতারাতি দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হবে না। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য ও সময়ের। এ বিষয়গুলো সমাজের বিশিষ্টজনসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের ইতিবাচক ভাবে দেখার জন্য তিনি বিনীত অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন যেভাবেই হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে সৈয়দপুরকে পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি।
তিনি বলেন পৌর পরিষদকে সাথে নিয়ে আমি সৈয়দপুর পৌরসভাকে একটি রোল মডেল পৌরসভায় পরিনত করতে চাই। আপনারা পাশে থাকলে অবশ্যই তা করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন দেশের সকল দপ্তরে এখন নারীরা সংযুক্ত। নারীরা কঠোর পরিশ্রম করে মেধা ও সততা দিয়ে অনেক দপ্তরের প্রধান হয়ে কাজ করছেন। দুঃখের বিষয় নীলফামারী জেলা বাস- মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নে কোন নারী সদস্য নেই। এ সংগঠনে নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তের দাবি জানান তিনি। নারীরা এ সংগঠনে যোগ হলে এটির আরও উন্নয়ন হবে।