বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নিয়ে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। যোগাযোগসহ অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের আগ্রহ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিন মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের দ্বার, অর্থাৎ শুরু হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম। জানা যায়, গত বছর মৌসুম শুরুর দিন পর্যন্ত যত পর্যটক নৌযানগুলোতে বুকিং দিয়েছিলেন, এবার বুকিং দিয়েছেন তার প্রায় দ্বিগুণ পর্যটক। নৌযান মালিক ও ট্যুর অপারেটরদের মতে, মূলত পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণেই পর্যটকদের আগ্রহ এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিস্তৃত। এর মধ্যে বনের ঘনত্ব ও প্রাণবৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ অংশটিই বেশি সমৃদ্ধ। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন থেকে পর্যটনভিত্তিক রাজস্ব আয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তার কারণ, সেখানে পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি ও বিস্তৃত। বাংলাদেশের সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢুকতে হয় মূলত মোংলা দিয়ে। খুলনা কিংবা সাতক্ষীরা অংশ দিয়েও অনেক পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। কিন্তু এতদিন সব পথই ছিল অনেক সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এতদিন মোংলা পর্যন্ত যেতে যে সময় লাগত, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে পর্যটকরা এখন কম সময়ে সুন্দরবন ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারছেন। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুর কারণে বন্দরনগরী মোংলার গুরুত্বও অনেক বাড়ছে। সেখানে হোটেল-মোটেল বা অন্যান্য স্থাপনা তৈরির কাজটি দ্রুততর হচ্ছে। আগে এসব সুযোগের জন্য মূলত নির্ভর করতে হতো খুলনা শহরের ওপর। অন্যদিকে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আশা করা যায়, কয়েক বছরের মধ্যে সুন্দরবনের পর্যটন সুবিধা আরো বিস্তৃত হবে এবং বাংলাদেশও সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন থেকে অনেক বেশি লাভবান হবে। এজন্য সুন্দরবনের ভেতরেও পর্যটন সুবিধা বিস্তৃত করতে হবে। আমাদের একটি বিষয়ে সচেতন হতে হবে, তা হলো সুন্দরবনের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা নির্ভর করবে এখানকার বনজ ও প্রাণিসম্পদের ওপর। বনজ ও প্রাণিসম্পদ যত সমৃদ্ধ হবে, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন নিয়ে আগ্রহ ততটাই বাড়বে। প্রতিবছর বন্য প্রাণী ও জলজ প্রাণীর প্রজনন নির্বিঘœ করার লক্ষ্য নিয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটনের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেখা যায়, অনেক পর্যটক খাদ্যদ্রব্য, বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য পরিত্যক্ত সামগ্রী বনের মধ্যে ফেলে দেয়। এগুলো বনের পরিবেশ নষ্ট করে। প্রয়োজনে ট্যুর অপারেটর ও নৌযান পরিচালনাকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তাঁরা সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সুন্দরবন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা, এর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের পরিকল্পনা সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে।