বৈশ্বিক মন্দা আর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত। সদ্যোবিদায়ি মাস আগস্টে আয় হয়েছে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই আয় গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬.১৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.১৪ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডালারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বরাবরের মতো রপ্তানির এই উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬.১ শতাংশ বেশি। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.২৪ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া দুই মাসে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি। ইপিবিন হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.৭২ শতাংশ বেশি ছিল। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫.৩১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৪.৫২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে। আর মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছরের মতো রপ্তানি আয়ে সুবাতাস বইছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে অন্য পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ২২ কোটি ৩২ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৩ শতাংশ। গত দুই মাসে তিন কোটি ৩৩ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ফলে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। অন্যান্য খাতের মধ্যে জুলাই-আগস্ট দুই মাসে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য এবং হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে আট কোটি ১৬ লাখ ডলার। এ ছাড়া স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে তিন কোটি ৯৩ লাখ ডলার, বাইসাইকেলে দুই কোটি ৪৯ লাখ ডলার এবং হস্তশিল্প থেকে পাঁচ লাখ ৭২০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাড়লেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বলেন, আগস্টের শেষে বাংলাদেশ ৩৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং এর ফলে সৃষ্ট অস্থির অর্থনৈতিক প্রভাব এরইমধ্যে রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্টে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩৭০ কোটি ডলার। যেখানে ২০২২ সালের জুনে ছিল ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। জুন থেকে পোশাক রপ্তানি কমতে শুরু করেছে এবং জুলাই ও আগস্ট ২০২২ উভয় ক্ষেত্রেই এটি জুনের রপ্তানির চেয়ে কম ছিল।