ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে মানব শক্তি ফাউন্ডেশন নামের একটি কথিত এনজিও ২ সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দিয়েছে এনজিও কর্মীরা। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপার ১৩নং উমেদপুর ইউনিয়নের গাড়াগঞ্জ এলাকার গাড়াখোলা গ্রামে।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, উপজেলার গাড়াখোলা এলাকায় অবস্থিত মানব শক্তি ফাউন্ডেশনের কথিত অফিসে সাউন বোর্ড ঝুলছে। ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের সাথে রয়েছে রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার সহ্ একটি সাইনবোর্ড,নেই অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বাড়ির মালিক। প্রতারক চক্ররা ২ সপ্তাহ আগে এই বাড়ির কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নেয় বলে জানান এলাকাবাসী। এ ভবনের মালিক শাহিনুর বেগম ওই গ্রামের বাসিন্দা।
এনজিও থেকে সহজশর্তে ঋণ নিতে গিয়ে প্রতারিত হওয়া শৈলকুপা পৌরএলাকার উত্তরপাড়া গ্রামের গিয়াসউদ্দিন জানান, মানব শক্তি ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার সায়েম আহমেদ ও ফিল্ড অফিসার রাজু আহমেদ গত মাসের ১৬ তারিখে তাদের ওখানে যান। এসে তারা সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা সবাইকে বলেন।ঋণ নিতে লাখে ১০ হাজার টাকা জামানত ছাড়া আর কোন শর্ত লাগবে না। যে বাড়িতে অফিস সে বাড়ির মালিক শাহীনুর তাদের আশ^স্ত করেন তার বোন জামাই এ প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। এ বিশ^াসে তিনি সহ ১৫ ব্যক্তি কাগজপত্রের ভোগান্তী না থাকায় ১০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। সোমবার তাদের ঋণ দেওয়ার কথা। কিন্তু ঋণ আনতে গিয়ে দেখি এনজিওসহ বাড়ির মালিক পলাতক। ফুলহরী, ভাটই, কবিরপুর, ২নং মির্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঋণ দেওয়ার নামে তারা গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েকদিনে কোটি টাকার বেশী টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে বলে জানান। মঙ্গলবার দুপুরে তারা এনজিও অফিসের বাড়ির মালিকসহ কথিত এনজিও কর্মকর্তাদের নামে শৈলকুপা থানায় অভিযোগ দিতে এসেছেন বলে জানান গিয়াস উদ্দিন।
ফুলহরী গ্রামের আজাদ হোসেন বলেন, তার চাচাতো ভাই মিল্টনসহ ৩০/৩৫ জন গাড়াগঞ্জের গাড়াখোলা গ্রামে মানব শক্তি ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে লোন নেওয়ার জন্য প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। গত সোমবার ৫৫ ব্যক্তির এক থেকে দুই লাখ টাকা লোন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবারে হয়তো রাতে বাড়ির মালিকসহ এনজিওটি উধাও হয়ে যায়।
গাড়াখোলা গ্রামের আবদুল জলিল জানান, গত কয়েকদিন আগে তার প্রতিবেশী শাহীনুরের বাসায় মানব শক্তি নামের একটি এনজিও’র সাইনবোর্ড দেখা যায়। সোমবারে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এই এনজিও থেকে লোন নিতে এসে দেখে তারা পালিয়ে গেছে। তবে বাড়ির মালিক কোথায় আছে তা তিনি বলতে পারেন না।
শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা জানান, গাড়াগঞ্জ এলাকা থেকে মানব শক্তি ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও লোন দেওয়ার নামে সাধারন মানুষের কাছ থেকে ১০/৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় নিয়ে উধাও হয়েছে।
কথিত এনজিও মানব শক্তি ফাউন্ডেশন উধাও হওয়ার ঘটনায় শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারন মানুষের সঞ্চয় নিয়ে এনজিও লাপাত্তার অভিযোগ নিয়ে কোন ব্যক্তি থানাতে আসেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, মানব শক্তি ফাউন্ডেশন নামের এনজিও সম্পর্কে তার জানা নেই। তার দপ্তরে এনজিওটি নিয়ে কোন ব্যক্তি অভিযোগও করেননি বলে জানান।