খুলনার পাইকগাছায় একের পর এক অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর চুল্লি গড়ে ওঠায় পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে গত ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়। খবর প্রকাশে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন। পরিবেশ সুরক্ষায় নিয়মিত কার্যক্রম হিসাবে উপজেলার চাঁদখালী অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অবৈধ চুল্লি ধ্বংস বা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মো. আসিফুর রহমান। এসময়ে চুল্লির আগুন নেভানোর জন্য পার্শ্ববর্তী উপজেলা আশাশুনি ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, জেলা সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ, জেলা পরিদর্শক মো. মারুফ বিল্লাহ, উপজেলা এপিসি মো. আনোয়ার হোসেন, পেশকার মো. ইব্রাহীম হোসেন, আনসার রাকিব সহ সঙ্গীয় পুলিশ ও আনসার সদস্য বৃন্দ। এসময়ে ৬৯টি চুল্লীর মধ্যে স্কাভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছে। বাকী কয়লা চুল্লী গুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারণে ১ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলিকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। প্রশাসনের এমন অভিযানে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ সাধুবাদ জানালেও মেনে নিতে পারেনি কতিপয় ব্যক্তিরা। উল্লেখ্য, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতি সহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারণে এতদিন কর্তৃপক্ষ্য নিরব ছিলো। অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। চাঁদখালীর পার্শ্ববর্তী কয়রায় নকশা এলাকায় চুল্লি চালাচ্ছেন কয়েকজন। দু’উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে চুল্লি চালাছেন। চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটিও। চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করেন বলে জানিনে একজন চুল্লি মালিক। এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন কোনো প্রকার বাধা-বিঘœ ছাড়াই নির্ভয়ে চুল্লি চালিছেন তারা। একাধিক ব্যক্তি বলেন, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এ সকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। চুল্লি মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। যে কারণে তাদের এই কাজে তেমন কোনো বাধা আসেনি। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি। চাঁদখালী চুল্লি কারখানার পাশে কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।