খুলনার কয়রা উপজেলার ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ২৩টি জলকপাট রয়েছে। এর মধ্যে আটটি অকেজো এবং ১৩ টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে লোনা পানি থেকে ফসল রক্ষা ও স্বাদু পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। খালগুলোয় পানিপ্রবাহ না থাকায় আমন আবাদে বিঘ্ন ঘটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ১৩-১৪/২ পোল্ডারে অবস্থিত ১৬টি জলকপাটের মধ্যে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন, নয়ানি, কুশুডাঙ্গা, কাঠমারচর এবং ১৪/১ পোল্ডারের সাতটি কপাটের মধ্যে ওড়াতলা, পদ্মপুকুর, বিনাপানি ও হাজতখালী সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এসব কপাট পুনর্র্নিমাণের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া কোনো রকমে পানি নিষ্কাশন চালু থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে নাকশা, মসজজিদকুড়, আমাদী, খোড়লকাঠী, শালুকখালী, হোগলারখাল, লালুয়া, নারায়ণপুর, গোবিন্দপুর, সুতিয়াবাজার, গড়ীয়াবাড়ী, জোড়শীং ও কয়রা কপাট। স্থানীয়রা জানায়, নব্বইয়ের দশকে বেশির ভাগ কপাট নির্মিত হলেও পরে তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে আটটি কপাট একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে হাজতখালী কপাট ভেঙে নদীতে তলিয়ে যায়। আর ধসে যাওয়ার চার বছরেও নির্মাণ হয়নি কয়রা সদরের গুচ্ছগ্রামসংলগ্ন ওড়াতলা কপাট। সচলগুলোর বেশির ভাগ কপাট ভেঙে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ জলকপাট ভাঙা, কোনোটির দুটি কপাটের মধ্যে একটি ভাঙা। আবার অনেকাংশে দেখা যায়, দুটি কপাটই সম্পূর্ণ আটকানো। এগুলো কখনো ওঠানো কিংবা নামানো যায় না। এগুলোতে মরিচা ধরে আটকে রয়েছে। ভাঙা কপাট দিয়ে সব সময় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করে ও ভাঁটা হলে নেমে যায়। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। তদারকির অভাবে এসব মূল্যবান সম্পদ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গড়িয়াবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, কয়রা খাল থেকে শাকবাড়ীয়া নদীর মুখের জলকপাট বাঁকা হয়ে আছে। জোয়ারের সময় লোনা পানি ঢুকে পড়ছে খালে। ওই গ্রামের কৃষকরা আমন আবাদে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম (কারিম) বলেন, আমন আবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার বৃষ্টি কম। প্রচুর পানির প্রয়োজন। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। জলকপাট বেঁকে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেও পানি ধরে রাখা যায় না খালে। মৌসুমের অর্ধেক সময় পার হলেও পুরো জমি আবাদ করতে পারেননি। এ ছাড়া কয়রা খালের জলকপাটের পাশের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে কপোতাক্ষ নদে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে কপাট। দড়ি বেঁধে চলছে কপাট ওঠা-নামার কাজ। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আসাদুজ্জামান রাব্বি বলেন, ১৪ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পনি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা গেলে কৃষকের ক্ষতি হবে। আমাদী পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন বলেন, ‘জলকপাট সংস্কারের বিষয়টি মেকানিক্যাল দপ্তর দেখভাল করে। অকেজো এবং ঝুঁকিপূর্ণ জলকপাটের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।