২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া রোগীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট এই হাসপাতালে। প্রকাশ্যেই তারা রোগীর পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া। অতিরিক্ত ভাড়া রোগীদের কাছ থেকে আদায় করলেও রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয় সরকার নির্ধারিত ভাড়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বৃহৎ হাসপাতাল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালটিতে রোগী পরিবহনে জন্য রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আবুল কালাম আজাদ (কাজল) ও নুরুজ্জামান নামের দুইজন চালক রয়েছেন। এরমধ্যে ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ সুবিধা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স জ¦ালানি খরচ বেশি হওয়ায়, তা গ্যারেজে তালাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিদিন রোগীদের পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। এই একটি অ্যাম্বুলেন্স মাসে ১০দিন করে চালায় দুইজন চালক। সরকার নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১০টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার, আসা-যাওয়া ২৬০ কিলোমিটার। সেই অনুপাতে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে আসা-যাওয়ার ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬০০ টাকা। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কোন প্রকার টুল ফি নেই। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের দুই অ্যাম্বুলেন্স চালক ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায়। এর কমে তারা রোগী নিয়ে যেতে চান না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সরকারি এই হাসপাতালের অনেক রোগীর স্বজনরা।
মুহিবুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিনদিন যাবত আমার মামা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন। ঢাকায় নিয়ে যেতে যখন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে যাব, তখন দেখি একটি অ্যাম্বুলেন্সে সরকারি হাসপাতালের নাম লেখা। আমি ঢাকায় রোগী নিয়ে যাওয়ার ভাড়া জিজ্ঞেস করলে এর চালক ভাড়া চাইলেন সাড়ে ৪হাজার টাকা। পরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের এক চালক ৫০০০টাকা ভাড়া চাইলেন। পরে সাড়ে ৪হাজারে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা গেছি।
আরিফুল ইসলাম নামের আরেক রোগীর স্বজন জানান, আমার ভাগ্নির কিছুদিন আগে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। কিন্তু তার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। এই হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেলে সাড়ে ৪ হাজার ভাড়ায় যাচ্ছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আবুল কালাম আজাদ (কাজল) বলেন, ‘একটি অ্যাম্বুলেন্স আমরা ১০দিন করে দুইজন চালাই। আমার সাথে চালক নুরুজ্জামানও একই ভাড়া নেন। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ৫০০০টাকা করে ঢাকা মেডিকেলে যেতে ভাড়া নেয়, আমরা সাড়ে ৪ বা সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় যাই। কারণ একটা স্টাফ সাথে রেখেছি, তাকে খরচ দিতে হয়। এছাড়াও নিজেও তো খরচ আছে৷’ সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২৬০০টাকা ভাড়া আসে, সরকার আপনাকে নিয়মিত বেতন দিচ্ছে। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারেন কিনা? এই প্রশ্নে উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
অপর চালক নুরুজ্জামান বলেন, আমি অ্যাম্বুলেন্স খুব কম চালাই। অতিরিক্ত ভাড়া আমি নেই না।
এই বিষয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১০টাকা৷ একটি জায়গা ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের কোন টোল দিতে হয় না। দুই চালক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া অতিরিক্ত নিচ্ছে কিনা, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।