নওগাঁর মান্দায় আঁখ চুরির কথিত অভিযোগ এনে গ্রামআদালতের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পাঁচ শিশুর বিচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিচারে ওইসব শিশুদের ১২০০ টাকা জরিমানাসহ এজলাস কক্ষে জনসম্মুখে তাদের চড়-থাপ্পড় ও কান ধরে উঠবস করিয়ে নেওয়া হয়।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামআদালতে এ বিচার কাজ করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। এ সময় ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য হারুন অর রশীদসহ এলাকার মাতবররা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, রুবেল হোসেন (১৩), তাজবিদ হোসেন (১৪), মিনহাসান (১৪), শান্ত ইসলাম (১৩) ও মহিদুল ইসলাম (১৫)। এদের মধ্যে রুবেল, তাজবিদ, মিনহাসান ও শান্ত বৈলশিং চকবাবন দাখিল মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অপর শিশু মহিদুল ইসলাম চার্জারভ্যানের চালক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈলশিং গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুপর গ্রামের আনিছুর রহমানের খেত থেকে আখ চুরি করতে যায় ওইসব শিক্ষার্থীরা। চোর সন্দেহে গ্রামবাসী ধাওয়া দিয়ে তাদের আটক করে। সংবাদ পেয়ে ভালাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা রাতে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি শিশুদের অভিভাবকদের শনিবার গ্রামআদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান।
বৈলশিং গ্রামের বাসিন্দা শাহিন আলম রানা বলেন, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামআদালতের আসামির কাঠগড়ায় পাঁচ শিশুকে দাঁড় করিয়ে বিচার সম্পন্ন করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। বিচারে চুরির অভিযোগ এনে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন চেয়ারম্যান। এ সময় বিচারের রায় মোতাবেক এজলাস কক্ষে উপস্থিত লোকজনের সামনে অভিভাবকেরা তাদের চড়থাপ্পড় দেন।
এ প্রসঙ্গে ভালাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এলাকার স্বার্থে ও সংশোধন করতে শিশুদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা হয়েছে। তাদের ভয়ভীতি দেখাতে জরিমানাও করা হয়। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
নওগাঁ জজকোর্টের আইনজীবী মহসীন রেজা বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী গ্রামআদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শিশুদের বিচার করার এখতিয়ার রাখেন না চেয়ারম্যানেরা। যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে সেটি বাড়াবাড়ি হয়েছে।
ঢাকা আইন ও সালিস কেন্দ্রের তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি খুবই ছোট। শিশুদের জনসম্মুখে না নিয়ে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরে ঘরে নিষ্পত্তি করে দিতে পারতেন। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো মোটেও উচিত হয়নি। এটি শিশু আইনের চরম লঙ্ঘন।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, আখ চুরির সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিস্তু অভিযুক্তরা শিশু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যনকে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি এইমাত্র জানলাম। গ্রামআদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শিশুদের বিচার করে থাকলে চেয়ারম্যান একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছেন।