জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়-য়া স্বাক্ষরিত এ পত্রটি সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সাংসদ বরাবরে গত ১১ সেপ্টেম্বরের স্বাক্ষরিত ওই পত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় অন্যান্য সকল পদ থেকে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। ওই বিষয়ে সাংসদের লিখিত জবাব আগামী ১৫দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা প্রদান করার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস অনুলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দেয়া চিঠির অনুলিপি হাতে পেয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এমপি পঙ্কজ নাথ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া তার স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোন পদ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি এমপি পঙ্কজ নাথের সাথে এক পুলিশ অফিসারের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়। মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খান বলেন, ওই কথোপকথনে একপ্রান্ত থেকে রামদা দিয়ে আমাকে (কামাল) কোপানোর নির্দেশদাতা হচ্ছেন এমপি পঙ্কজ নাথ। তিনি (এমপি) দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এসব বলতে পারেন না। মেহেন্দিগঞ্জকে অশান্ত করতে এমপি পঙ্কজ দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তিনি অস্ত্রের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘায়েল করতে চান। পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে বলেও তিনি (কামাল) উল্লেখ করেন।
কামাল উদ্দিন খান আরও বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ওইসময় পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। এছাড়াও সাংসদ পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। যেকারণে অধিকাংশ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছেন। এ কারণে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন না দেয়াসহ মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও এডিটিং করা হয়েছে দাবী করে সাংসদ পঙ্কজ নাথ বলেন, আমি জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের কতিপয় নেতার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বদনাম করতে ওইসব নেতারা দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছেন।
নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পঙ্কজ নাথ আরো বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। কিন্তু দলের তৃণমূল পর্যায়ে কতিপয় প্রভাবশালী নেতার লোক হয়ে রাজনীতি না করার কারণে আমার মতো অনেক পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে দলের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আমি শতভাগ বিশ্বাস করছি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সব বিষয়ের ফয়সালা হবে। তিনি (শেখ হাসিনা) যে নির্দেশ দিবেন আমি তা মাথা পেতে গ্রহন করবো।