খুলনার পাইকগাছায় বিরামহীন দু’দিনের বৃষ্টিতে ওষ্ঠাগত প্রাণীকুলের স্বস্তি ফিরেছে। আর প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফসলের মাঠ। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে পুড়েছে ফসলের মাঠ। আর ওষ্ঠাগত ছিলো প্রাণীকুল। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত স্থল নিন্মচাপের কারণে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাইকগাছায় শিবসার জোয়ারে অতিরিক্ত পানির চাপে পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে নদীর বুক চিরে গড়ে তোলা শহর রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে পৌর সদরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে থানা সদরের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, কাঁচাবাজারসহ নিন্মাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, নদীতে জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে সদ্য নির্মিত শহররক্ষা বাঁধের থানার সামনের অংশ ভেঙ্গে গেছে। এতে ঐ এলাকা দিয়ে প্রবল গতিতে বাঁধ অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ায় থানার সামনের নির্মিত বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, কাঁচাবাজার, কাঁকড়া পট্টিসহ নিন্মাঞ্চলে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পথচারীসহ, দোকানিদের ভোগান্তির পাশাপাশি নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে বৃক্ষরাজির। এর আগে পৌরকর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে পৌরশহর রক্ষার নামে অপরিকল্পিতভাবে শিবসা নদীর চরভরাটি অংশ ঘিরে বাঁধ নির্মাণ করে। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এ বাঁধের উদ্বোধন করেন। শুরু থেকেই চরম সমালোচনার মুখেও শুধুমাত্র শহররক্ষার স্বার্থে বাঁধটি সম্পন্ন হয়। এর মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই বাঁধের অভ্যন্তরে খন্ড খন্ড করে বেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করে শুরু হয় মাছ চাষ। শিবসার চরভরাটি বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা বনায়ন প্রকল্পের অভ্যন্তরে পানি জমে থাকায় সেখানকার গাছেও ব্যাপকহারে মড়ক শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে, ৭ দিনের মধ্যে বাঁধ অপসারণের জন্য স্থানীয় পৌরসভাকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম। তবে এরপরও বাঁধটি অপসারণ না হলেও শেষ পর্যন্ত শিবসার জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপ সহ্য করতে পারেনি। শিবসা নদীর তীরে ১৯৯৭ সালে পাইকগাছা পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ পরেও নদী তীরে কোনো বাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি যথাযথ কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় শিবসায় জোয়ারের পানিে প্লাবিত হতো পৌর অভ্যন্ত। এতে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি দোকানপাট, রাস্তা-ঘাট লোনা পানিতে তলিয়ে যেত। সবুজ বৃক্ষরাজিতেও পড়তো নেতিবাচক প্রভাব। সর্বশেষ সমালোচনার মুখেও পৌরকর্তৃপক্ষের দেয়া বাঁধটি স্থাপন হলে সুযোগ পায় দখলদাররা। তারা বাঁধের অভ্যন্তরে খন্ড খন্ড করে বাঁধ দিয়ে দখলে নিয়ে শুরু করে মাছ চাষ। এ ছাড়া বাঁধের অভ্যন্তরে জমে থাকা পানিতে মৃত্যু হয় বনায়নের বহু গাছের। শিবসা তীরে শহর রক্ষা বাঁধের ফলে, জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে না পারলেও, বৃষ্টির পানিতে বাঁধের ভেতরের অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, শিবসা নদীর চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতা গাছ। এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে জলাবদ্ধতার কারণে একে একে সেখানকার সব গাছ মারা যাবে। ইতোমধ্যে গাছ মরা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ রোব ও সোমবার প্রবল বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের অতিরিক্তি পানির চাপে পৌরকর্তৃপক্ষের দেয়া শিবসার বাঁধের থানা ভবনের সামনের অংশে ভেঙ্গে যায়। এ সময় থানার সামনের বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, রাস্তা-ঘাট, কাঁচা বাজারসহ নিন্মাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে লোনা পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. রাজু হাওলাদার বলেন, তারা শিবসার কোথাও বাঁধ নির্মাণ করেনি। কেউ করে থাকলেও তা পাউবো অনুমোদিত নয়। সুতরাং বাঁধ ভাঙনের খবর তাদের কাছে নেই।