বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে রাজধানীতে কয়েকদিন বৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ঝুম বৃষ্টি বুধবারও অব্যহত ছিল। এতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। রাজধানীতে এমনিতেই যানজট নৈমিত্তিক ঘটনা। এর সঙ্গে জলাবদ্ধতা যুক্ত হয়ে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রচ- যানজটের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। মূলত বিআরটি প্রকল্পের ব্যর্থতাই দায়ী এ যানজটের জন্য। এ প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণে খানাখন্দে ভরা জয়দেবপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর সড়কে জলজট দেখা দেয়। এ কারণে ওই সড়কে গাড়ি চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থবির হয়ে পড়ে। এর ফলে গাজীপুর ও রাজধানী ঢাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া রাজধানীর ভাঙাচোরা ও গর্তে ভরা সড়কেও জলজটের কারণে যানবাহনের গতি কমে যায়। একদিকে ঢাকাণ্ডময়মনসিংহ হাইওয়ে, অন্যদিকে প্রগতি সরণির এয়ারপোর্টমুখী সড়ক ছিল স্থবির। ঢাকাণ্ডময়মনসিংহ রোডের যানজটের প্রভাব পড়ে মিরপুর ইসিবি চত্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে মতিঝিল থেকে মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, শাহজাদপুর, কুড়িল হয়ে এয়ারপোর্ট রোড ছিল স্থবির। এতে পরপর দুদিন নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকার পর গন্তব্যে পৌঁছান নগরবাসী। অনেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে পৌঁছান গন্তব্যে। যানজটের প্রকোপ টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর ও মিরপুরের কালশি এলাকায় থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিস্তৃত হয় চতুর্দিকে। ভয়াবহ যানজটের কারণে খুব প্রয়োজন নেই এমন অনেকে ফিরে গেছেন বাসায়। সুযোগ বুঝে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও মোটরবাইকের রাইডশেয়ারিংয়ের চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। অথচ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পায়নি রাজধানীবাসী। তাহলে কি এ বিপুল অঙ্কের অর্থ পানিতে গেছে? দেখা যাচ্ছে, অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই রাজধানীতে জলজট সৃষ্টি হয়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে গত এক দশকের বেশি সময় থেকে সেবা সংস্থাগুলো খাল, ড্রেনেজ, নর্দমা পরিষ্কার ও উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তারপরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না কেন। রাজধানীর জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত। এখন দরকার সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বস্তুত বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবেই রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধানে প্রথমে রাজধানীর খালগুলো দখলমুক্ত করা জরুরি। আবার যেসব খাল দখলদারদের থাবামুক্ত, সেসব ব্যবহৃত হচ্ছে আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসাবে। বস্তুত জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ বিপুল অর্থ বরাদ্দ করাই যথেষ্ট নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সম্ভাব্য কী ফল মিলবে, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আগেই তা জেনে নিতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আগামীতে অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে রাজধানীর জলাবদ্ধতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।