আত্মহত্যা! ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত ঘৃণার এই কাজটি মোটামুটি সব বয়সের মানুষই করে থাকে! বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র, কথাটা এখানে যেন খুব মানানসই।
আত্মহত্যা : ফলোয়িং দ্য ট্রেন্ড!
দেশে মাঝে মাঝেই আত্মহত্যার ট্রেন্ড আসে! ট্রেন্ডটাই এমন- শেষ কথা হলো, মরে যেতে হবে! ভাবনাগুলো সাধারণত এমনটাই হয়ে থাকে- জীবনের এই বোঝা আর টানা সম্ভব না! পরিসমাপ্তি কেবল মৃত্যুতে! বেঁচে থাকার আর কোনো কারণ নেই! মরে গেলে বর্তমানের কিছু ঘটতোই না!
উল্লিখিত ভাবনাগুলোকে আপনার কাছে কী মনে হয়? স্বাভাবিক?
¯্রােতের বাইরে গিয়ে অনেকে খোঁজেন আত্মহত্যার সপক্ষে যুক্তি! আসলেই কি যুক্তি আছে কোনো? মৃত কোনো ব্যক্তির পক্ষে কি সম্ভব ফিরে এসে জানানো যে, কেমন অনুভূতি হয় মরে যেতে? কিংবা যিনি আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে ফিরেছেন, তার থেকে কি জানার সুযোগ হয়েছিলো যে, ঠিক কেমন লেগেছে তার ওই সময়টায়? স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা শহিদের জন্য সাহসের হলেও জীবনের যুদ্ধে বিরতি দেওয়া মানুষের জন্য নয়, একথা তাদের কে বোঝাবে?
সুখের সময়গুলো ক্ষণিকের! শেষ হয়ে যায় চোখের পলকেই কিন্তু রেশটা থেকে যায়। আচ্ছা, সুখের সময়গুলোতে দাঁড়িয়ে থেকে কখনও কি কারও আত্মহত্যা করতে মন চেয়েছে? আনন্দের মুহূর্তে থাকাকালীন কি মরে যেতে মন চেয়েছে? বরং সময়টা যাতে ওখানেই থেমে থাকে এই মিনতিতে দীর্ঘদিন বাঁচার প্রত্যয় থাকে অনেকের।
তাহলে ঠিক বিপরীতে অর্থাৎ দুঃখের সময়টায় চিত্র পাল্টে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে? কখনও এভাবে ভেবে দেখেছেন, আপনার জীবন কি আপনার জন্য, না-কি অন্যের কারণে আপনার এই বেঁচে থাকা? অন্য কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না, এজন্য মরে গেলে কিভাবে গুরুত্ব আদায় হবে? একটু ভাবুন, একটা জীবনে সবার গুরুত্বের কি আদৌ প্রয়োজন আছে, না-কি সম্ভব? কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তো কী? আপনি আপনাকে সময় দিন, গুরুত্ব দিন।
একটু ভেবে বলুন তো, আত্মহত্যা কি আসলেই সমাধান? মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? জীবনের দুঃখ থেকে বাঁচতে, এই-ই তো বলবেন! তবে এটা বলুন, মৃত্যু যন্ত্রণা কি জীবনের সব দুঃখ থেকে বেশি না-কি কম? জীবনের দুঃখে কাতর হওয়া মানুষ বেঁচে থাকার সাহস না দেখিয়ে মরতে চায়। দুঃখ যে সইতে জানে না, সে মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুর ধৃষ্টতা দেখিয়ে অজানা গন্তব্যে চোখ বোঁজে। সার্বিক বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আত্মহত্যার সাংকেতিক ভাষা!
প্রতিটা বিষয়ের কিছু ইঙ্গিত থাকে, সংকেত থাকে। তাই বলে যারা আত্মহত্যা করবেন তাদের সবার সংকেত কি এক? অবশ্যই না। তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু সাধারণ বিষয়ের কথা বলেন। যেমন-
■ আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি নিজের সরঞ্জাম নিজের কাছেই রাখেন।
■ অ্যালকোহল বা ওষুধের ব্যবহার হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিতে পারেন।
■ নিজের প্রিয় জিনিসগুলো বিলিয়ে দেওয়া শুরু করেন। নিজ বলতে কিছুই রাখেন না।
■ কথায় কথায় বিদায় এর কথা বলা। মৃত্যু নিয়ে কথা বলা বা তার লেখায় প্রকাশ পাওয়া।
■ সবার সাথে মেলামেশা কমিয়ে দেন। মোটামুটি সবার সাথেই দুরুত্ব বাড়িয়ে দেন। সব ধরণের বিষয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
এর বাইরে এমন কিছু মানুষও দেখা গেছে, যারা খুবই মিশুক। হাসিখুশি। সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। অন্তত চারপাশের লোক তাকে এভাবেই চেনে অথচ হঠাৎই দেখা গেলো মানুষটা আত্মহত্যা করেছে!
সুইসাইড নোট :
কেউ মারা গেছে। সেটা স্বাভাবিক না-কি স্বেচ্ছাকৃত, তা বোঝার জন্য সুইসাইড নোট খুব তাৎপর্যপূর্ণ। যিনি আত্মহত্যা করেন তিনি খুব গুছিয়ে অথবা অগোছালো অনুভূতিগুলোকে কিছু এলোমেলো শব্দে লিখে যান। সেই চিরকুট বা চিঠিকে আমরা সুইসাইড নোট বলি।
তবে সুইসাইড নোটগুলো পড়ে এ পর্যন্ত যত কারণ পাওয়া গেছে সেগুলোকেই আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মেনে নিয়েছেন সবাই। হতে পারে এটা আর্থিক টানাপোড়েন। বাচ্চাদের ঠিকমতো খেতে দিতে কিংবা পড়াতে না পেরে আত্মহত্যা করেন অনেকে। চাকরির প্রয়োজনে কাজ খুঁজে না পাওয়া, ওদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে কিংবা ঘরে বয়স্ক বাবা-মা আছেন। অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক কিন্তু কর্মদক্ষতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে হয়তো লড়তে পারছেন না, একটার পর একটা ইন্টারভিউ বোর্ডে যাচ্ছেন কিন্তু ভাগ্য সহায় হচ্ছে না। পরিবার জানতে চায় চাকরি কবে, প্রতিবেশী জানতে চায় চাকরির খোঁজ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে, লজ্জায় অনেকে মুখ লুকোতেও বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
চলছে প্রতিযোগিতার যুগ। কার থেকে কার সন্তান পড়াশোনায় এগিয়ে থাকলো- এ নিয়ে বাবা-মায়েরা নামেন প্রকাশ্য যুদ্ধে। অমুকের সন্তান এ প্লাস পেয়েছে, অমুকের ছেলে বা মেয়ে ফার্স্ট হয় বা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়, মানে নিজের সন্তানকেও পেতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের যাই ঘটুক, রেজাল্ট ভালো চাই! বলি, এই বাবা-মায়ের সন্তানেরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও ভয়ে বাবা-মাকে নিজের গল্পটা বলতে পারে না। বিপরীতে অকৃতকার্য হওয়ার ঘটনা জানলে বাসায় কী বলবে, বাবা-মা মুখ দেখাবেন কী করে- এমন অজানা শঙ্কায় হয়তো একটা নোট লিখেই পাড়ি জমাবে অজানায়! নিজেকে প্রশ্ন করতেই পারেন- সন্তানের থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস বড়ো হয় কিভাবে?
অনেক বাবা-মা আছেন, পান থেকে চুন খসলেই খুব বাজেভাবে সন্তানের গায়ে হাত তোলেন। বকুনি বা ধমকানো তো আছেই, কুরুচিপুর্ণ কথা আর গালিগালাজও বাদ থাকে না। একে টক্সিক প্যারেন্টিং বলা হয়ে থাকে। একটা বিষয় কি জানেন? শিশু শেখে বড়োদের থেকে। আর শিশুদের নিকটতম বড়ো হচ্ছেন, অবশ্যই বাবা-মা। একটা শিশুর আচরণ বুঝতে হলে, দেখতে হবে কথোপকথনে তার প্রত্যুত্তর কেমন। একই সাথে বোঝা যাবে পরিবারের আচরণ আদতে কেমন। পারিবারিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপুর্ণ, যা আপনি শেখাচ্ছেন বা যা সে দেখছে, শিখছে তাই। তাই কোনো সন্তান যদি বাবা-মায়ের ভয়ে এতটাই কাবু থাকে যে, বিষণ্ণতায় ভর করে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, তখন ওই পরিবারের সার্বিক শিক্ষার বিষয়টি সামাজিকভাবেও প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়।
অনেক দম্পতি প্রায় সবকিছুতেই রাত-দিন বাকবিত-া আর ঝগড়া করেন; একে অন্যকে অসম্মান করেন; মূল্যায়ন করেন না। সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি অনেক দম্পতিদের মধ্যে একেবারেই থাকে না। দুটো মানুষ একাত্ম হয়ে বসবাস করবে, একে-অপরকে সম্মান করবেন; এটা সমাজের সিদ্ধান্তের চাইতে বড়ো শিক্ষা হলো ধর্মীয়। সম্মান সে অবশ্যই প্রাপ্য, হোক সে ঘরের গৃহিণী কিংবা বাইরের কর্মজীবী। একটা মানুষ যখন জীবনসঙ্গী, তখন স্বাভাবিকভাবেই সম্মান, বিশ্বাস, মূল্যায়নের প্রাপ্য তিনি। আর অবহেলায় দ্বন্দ্ব, কলহ হওয়া তো অস্বাভাবিক না। এ থেকে বাঁচতে অনেকে হাঁটেন বিচ্ছেদের পথে। অনেকে আবার বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেন না। তখন সমাজের কটূক্তি আর সম্মানহানির ভয়ে হয়তো বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। হঠাৎ হয়তো ভালো লাগে কাউকে। কিন্তু ভাগ্য কি আর সবার ক্ষেত্রে সহায় থাকে? নানান বাঁধা আর অমিল থাকে। কেউ হয়তো সবটা পেরিয়ে এক হন, কেউ-বা মাঝপথে ছেড়ে যান প্রিয় হাতটা। যে হাত ধরে জীবনের শেষ পর্যন্ত একসাথে থাকার ইচ্ছে, সেই হাত ছেড়ে থাকাটা কতটা শূন্য অনুভূতির জন্ম দেয়, এ তারা বুঝবেন না যারা এই পথে হাঁটেননি। অনেকেই সয়ে যেতে পারেন এই ব্যথা, কেউ পারেন না। চলে যান এক আকাশ সমান অভিমান নিয়ে। লিখে যান- না পাওয়ার এক হাহাকার!
চাইল্ড অ্যাবিউজ এর বিষয়টিই ধরুন। ছোটবেলায় এই ঘটনা নিয়ে বড়ো হওয়া মানুষ নেহায়েত কম না। ছোটোবেলায় অনেকে অনেক কিছুই বুঝতো না। এটাও বুঝতো না ঠিক কী হচ্ছে তার সাথে। বড়ো হয়ে যখন অনেক কিছুর হিসাব মিলে যায় তখনই নিজের উপর ঘৃণা চাউর হয়। বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
দারিদ্রের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এমন মানুষও কম নয়। ভারতেই কৃষকদের অনেকে আত্মহত্যা করেছেন।
উল্লিখিত এসব কারণ ছাড়াও, অনেক কারণ আছে। হয়তো সেসব আমাদের অজানা। সবাই তা সামনে আনেন না। কেউ আনেন। আর অতটা জেনেই শিউরে উঠি আমরা!
আত্মহত্যাবিষয়ক পরিসংখ্যান:
এই তো গেলো আমাদের দেশের অবস্থা। এবার অন্য দেশগুলোর কথায় আসা যাক।
প্রতি বছর বিশ্বে আত্মহত্যা করেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ! নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি! ২০১২ সালে একটা সমীক্ষা হয়েছিল, তাতে উঠে আসে পুরো বিশ্বে নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার সংখ্যা ১.৮ গুণ বেশি।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে একটু যাই। ২০২০ সালে ন্যাশনাল ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অবস্থা কতটা করুণ ভাবতে পারছেন?
এবার একটু জাপানের দিকে যদি এগোই তাহলে দেখা যাবে শুধু ২০২০ এর অক্টোবরেই ৮৩% নারী আত্মহত্যা করেছেন, সেখানে পুরুষ ২২%! কী মনে হচ্ছে এখন? ২০২০ এ করোনার চেয়ে আত্মহত্যা বেশি ভয়ংকর ছিল না? দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ভক্ত সারা বিশ্বে আছেন। জানলে অবাক হবেন, আত্মহত্যার সর্বোচ্চ হার ওখানেই। প্রতি লাখে ২২ জন!
এছাড়া ট্রান্সজেন্ডার, সমকামী, গে এবং উভকামী লোকের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি। শুধু ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির মধ্যেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টা ৩০%-৫০%!
এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান আমাদের আটকে দেয় তা হলো- আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে! উন্নত বিশ্বের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ৩০% মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা!
৫৬টি দেশের সমীক্ষায় পাওয়া গেছে শুধু গলায় ফাঁস লাগিয়েই আত্মহত্যা করেছেন ৫৩% পুরুষ এবং ৩৯% নারী এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ৮০-৯০%, পানিতে ডুবে গিয়ে ৬৫-৮০%, ৬০-৮৫% গলায় ফাঁস দিয়ে, গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ৪০- ৬০%, উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়ে ৩৫-৬০%, নিজেকে পুড়িয়ে দিয়ে ৪০-৫০%, কীটনাশক পান করে ৬০-৭৫%, ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে ১.৫-৪% আত্মহত্যা করেন!
আমরা সর্বনাশা ব্যাধিতে আটকে আছি:
অন্য দেশের দিকে তাকানোর দরকার নেই। আমাদের দেশের দিকে তাকালেই আমাদের আতঙ্কিত করে।
একটা সময় ছিল, যখন বছরে ১/২টা আত্মহত্যার ঘটনা শোনা যেতো। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সরব থাকতো। যুগ পাল্টেছে! স্কুলগামী থেকে শুরু করে কলেজ, মেডিক্যাল, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিজীবী কিংবা বয়স্ক, কেউই বাদ থাকছে না। আসামি পর্যন্ত আত্মহত্যা করছে! কেউ-বা ফেসবুক লাইভে গুলি করছে নিজেকে, কেউ গলায় ফাঁস লাগাচ্ছে! একটা নয়, একাধিক জেনারেশন যেন উঠেপড়ে লেগেছে নিজেকে শেষ করার জন্য। অনেকেই ভাবেন, মরে গেলেই মুক্তি! আসলেই কি তাই? মৃত্যুর পরের জীবন কেমন? অথচ আনন্দের বেঁচে থাকার পথ মাড়িয়ে মানুষগুলো ডুবতে চায় অনন্তের পথে?
উন্নত বিশ্বে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ভীষণ কড়াকড়ি। ওখানের চিত্রও আমাদের অবাক করে। আমাদের দেশের তুলনায় উন্নত বিশ্বের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো হওয়া সত্ত্বেও ওখানের তুলনায় আত্মহত্যার হার আমাদের দেশে কম! তবে একথা সত্যি যে, উন্নত বিশ্বে নাগরিকদের মানসিক অসুখের গুরুত্ব আছে। বিভিন্ন কাজের জায়গা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে মানসিক অসুখ সারাবার জন্য সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং। এসব জেনে যদি কেউ আমাদের দেশের দিকে তাকায়, শুধুই হতাশা। বিদেশে শরীরের অসুখ এবং মনের অসুখের চিকিৎসা হয়। মনের অসুখের নাম বিষণ্ণতা। আমাদের দেশে যেন এ নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। এ দায় রাষ্ট্রেরও কম নয়।
তবে হ্যাঁ, পরিবার বা সমাজকে ঠিক রাখতে রাষ্ট্রের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের দেশের মতো দেশগুলোতে, না আছে সামাজিক নিরাপত্তা, আর না আছে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। এ দুই নিয়ে কাজ করাটা রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকির। অনেকেই বলবেন দেশে পর্যাপ্ত পার্ক, থিয়েটার, লাইব্রেরি আছে। সেক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন আসে ওখানকার পরিবেশ নিয়ে! দেখুন, দায় ঘুরে ফিরে সবার দিকেই এগোয়। তাহলে বলাই যাচ্ছে কোনো দৈবশক্তির আশায় বসে থাকলে আর যাই হোক, আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো যাবে না।
সমাধান কি আসবে না!
যে ছেলেটা স্কুলের বেতন দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ ধরে; তার জন্য এমনকি তার মতো শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়াটা কঠিন কিছু কি?
যে মেয়েটা বাল্যবিয়ের ভয়ে আত্মহত্যা করতে চায়, তার পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্ব কিন্তু ওই পরিবারের আত্মীয়, প্রতিবেশী এমনকি সমাজের। যে ছেলেটা বা মেয়েটা নিজের পছন্দে বিয়ে করতে চায়, তাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে করানো কিংবা দেওয়ার প্রয়োজন কী? অন্তত তাদের বোঝানোর দরকারটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।
অনেক বাবা মা-ই ভাবেন, সন্তানকে পৃথিবীতে আনাই দায়িত্ব, এরপর সন্তান যা করবে তা বাবা মায়ের খুশির জন্য। তাহলে প্রশ্ন, সন্তানের খুশির জন্য কী করছি আমরা? বাবা-মায়ের খুশির কাজ সন্তান করবে, সেই সন্তানের খুশির জন্য কাজ করবে তার সন্তানেরা। আচ্ছা, নিজের খুশির জন্য নিজেরা কাজ না করে কেন আরেকজনকে ব্যবহার করছি আমরা?
বিষণ্ণতার গল্পগুলো শোনার মতো একটা কেন্দ্র থাকা এখন সময়ের দাবি। যেখানে মন খারাপের দিনগুলো জমা রাখা যাবে। অন্তত যাতে কেউ মন খারাপগুলো জমিয়ে আত্মহত্যা করে বসবে না। মোটামুটি সবাই ব্যস্ত আমরা। কিন্তু যে আমাদের সময় চাচ্ছে, তাকে বিনিময়ে ব্যস্ততা দেখানো কি যৌক্তিক? যে সময় পেলে খুশি, তাকে অন্য কিছু দিয়ে কতক্ষণ খুশি রাখা সম্ভব? সময় খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে। আমরা ভুলেই যাই, দিনশেষে কেউ একজন বা কিছু মানুষ আমাদের অপেক্ষা করে। আমরা তাদের ব্যস্ততা দেখিয়ে ঘুমাই। তারা অভিমানে রাত জাগে কিংবা মুখ লুকোয় নীল-সাদা দুনিয়ায়।
কিচ্ছু ভালো লাগে না, এমন রোগের রোগী, আমাদের সমাজের অনেকেই। সবার মন খারাপ হয়। খেয়াল করে দেখুন, আপনার পাশেই কেউ আছে, যে মন খারাপ কিংবা এর চেয়েও বাজে ঝড়-ঝাপটা সয়ে দিব্যি হাসেন, বাঁচেন। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, অল্পেই ভেঙেচুড়ে যান। আত্মবিশ্বাস খুব বড়ো জিনিস। একটা বিষয় কী, আপনার মনের যতœ আপনি না নিলে কেউ নেই ফিরে তাকানোর।
জীবন কি কোন হ্যাপি আনএন্ডিং মুভি- যে হাসি আনন্দ চলতেই থাকবে? না-কি রঙের এমন কোনো ক্যানভাস যেখানে ধূসর মলিন বর্ণের রঙ থাকবে না? মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ধৃষ্টতা যার হয়, তার কেন সাহস হয় না চোখ রাঙিয়ে বেঁচে থাকার? যে আপনাকে মৃত্যুর একটা পথ দেখিয়ে দেয়, তাকে কেন আপনি বেঁচে থাকার ১০০টা পথ দেখিয়ে দিতে পারছেন না? ব্যর্থতা মেনে এই মরে যাওয়াই কি জীবন? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত, আপনার বিবেক কী বলে?