কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৩০০টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত দেড় লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারি এসব শিক্ষা উপকরণ পেয়ে বেজায় খুশি এখানকার শিক্ষার্থীরা। উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা শিক্ষা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বিভিন্ন সরকারি খাত থেকে এসব উপকরণ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষা উপকরণ হিসাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ এক অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে এসব সহযোগিতা পৌঁছানো হচ্ছে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে।
করোনার প্রভাবে টানা দুই বছর শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির থাকার পর পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক ছিল না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গৃহীত নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ বিতরণের ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠকেন্দ্রের ওপর আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে এ উপজেলায় বছরে ১০০টির বেশি বাইসাইকেল দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন সময় সামর্থ্য ও সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বিতরণ করা হচ্ছে নানা ধরণের শিক্ষা উপকরণ। এর মধ্যে রয়েছে- আর্থিক বৃত্তি, বাইসাইকেল, ছাতা, ব্যাগ, টিফিনবক্স, খাতা-কলম ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন বলেন, ‘আমরা মূলত নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে যেন শিক্ষা উপকরণের অভাবে শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে সেই দিকটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহিত করছি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরদার মোহাম্মদ আবু সালেক বলেন, ‘শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহ বাড়ছে, অনেকেই এসব উপকরণ পেয়ে নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছে।’
উপজেলার হোসেনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র এবং দৌলতপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ জানিয়েছে শিক্ষা উপকরণে তাদের সুবিধার কথা। চরাঞ্চলের চার মাইল পথ নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার কথা জানিয়ে অন্যরকম আনন্দ প্রকাশ করেছে সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষা উপকরণ পেয়ে তাদের মতো আরো অনেক শিক্ষার্থী এখন বেজায় খুশি।
সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর এ উপজেলায় দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ইউএনও শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নগদ অর্থ ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে এই শিক্ষাবৃত্তির অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হান্নানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এবং দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিদ্যাপীঠের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকরী হবে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে তারা পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থীদের এসব উপকরণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল জব্বার জানান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং চলছে। সম্প্রতি ইউএনও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।