পিরোজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদ প্রশাসক, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ১১ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর রিটার্নিং অফিসারের কাছে তার মনোননয়নপত্র জমা দেন। উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনেও মো. মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। সে সময়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহ আলম। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দল অংশগ্রহণ করছে না। তাই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন এবং গ্রহনযোগ্যতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী থাকা উচিৎ। তাছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে দল শুধু একজন প্রার্থীকে সমর্থন বা মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানে দলীয় নৌকা প্রতিক বরাদ্ধ দেওয়া হয় নি। সেক্ষেত্রে এ নির্বাচন কোন দলীয় নির্বাচন নয়। জেলা পরিষদের নির্বাচনে অন্য প্রতিকে নির্বাচন হবে, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি এ নির্বাচনটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিৎ। কেননা একের অধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচনটাও একটা উৎসবমূখর হয়ে উঠবে। কে জিতবে বা কে হারবে সেটা নির্ধারন তো করবে ভোটাররা। তাই তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের সকল ভয়ভীতি, রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের জেলা পরিষদের নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলাম। চেয়ারম্যান থাকা কালে পিরোজপুর জেলা পরিষদকে একটি দুর্নীতিমুক্ত মডেল জেলা পরিষদের পরিনত করেছি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছি। সকল উন্নয়নমূলক কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে দলীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করেছি। আগামী ১৭ অক্টোবরের নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আবেদন পুন:বিচেনার জন্য অনুরোধ করছি। আশা করি দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মানবতার মা’ জননেত্রী আমার আবেদন পুন:বিবেচনা কববেন। পিরোজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্য ৭৪৭ জন। এরমধ্যে পিরোজপুর সদর উপজেলায় ভোটার হচ্ছেন ১০৭ জন, নাজিরপুর উপজেলায় ১২০ জন, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলায় ১৪৬ জন, ভান্ডারিয়ায় ৯২ জন, কাউখালীতে ৬৮ জন, ইন্দুরকানীতে ৬৮ জন এবং মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৪৬ জন। উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিস্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। পিরোজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী মনোনায়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহষ্পতিবার(১৫সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল। পিরোজপুর জেলা নির্বাচন অফিসার ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটানিং অফিসার মো. জিয়াউর রহমান খলিফা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জন, ৭টি সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ৩৪ জন এবং ৩টি সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য পদে ১৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারীরা হলেন- পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদ প্রশাসক, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী সালমা রহমান হ্যাপী, ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ আল মাসুদ, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর হাসিনা মনি, পিরোজপুর সদর উপজেলার শরিফুজ্জামান সিকদার এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার মো, আমির হোসেন। এ ছাড়া ৭টি সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ১নং ওয়ার্ডে (নাজিরপুর উপজেলা) প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন, ২নং ওয়ার্ডে (নেছারাবাদ) ৪ জন, ৩নং ওয়ার্ডে (পিরোজপুর সদর) ৫ জন, ৪নং ওয়ার্ডে (ইন্দুরকানী) ৩ জন, ৫নং ওয়র্ডে (কাউখালী) ৫ জন, ৬নং ওয়ার্ডে (ভান্ডারিয়া) ৩ জন এবং ৭নং ওয়ার্ডে (মঠবাড়িয়া উপজেলা) প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। সংরক্ষিত (মহিলা) ৩টি সদস্য পদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে (নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠী উপজেলা) প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন, ২নং ওয়ার্ডে (পিরোজপুর সদর, ইন্দরকানী ও কাউখালী উপজেলা) ৩ জন এবং ৩নং ওয়ার্ডে (ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলা) প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন।