রোগমুক্তির আশায় পাকড়গাছের একপাশে মুসলমানরা মাগরিবের নামাজ আদায় করছেন অন্য পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা অর্চনায় ব্যস্ত আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুদিয়া গ্রামের এক পাকড়গাছকে ঘিরে। মন্দিরের পাকড়গাছ ঘিরে নামাজ পূজা ও ঝাড়ফুঁক এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিষ্ণদিয়া গ্রামের উলফা জোয়ার্দ্দারের ছেলে আমিরুল ইসলাম। সে বিষ্ণুদিয়া গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। একজন মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হয়ে কিভাবে এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে তা নিয়ে নানামহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বর্তমান বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী পূরুষ রোগ মুক্তির জন্য পাকড় গাছের নীচে ভীড় করছে। এক শ্রেণীর নারী পূরুষ অন্ধ বিশ^াসে এখানে আসছেন মনের বাসনা পূরণ করতে তবে অনেকেই বলছেন এসব কুসংস্কার আর ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামের কালি মন্দিরের পাশেই বিশাল আকৃতির এই পাকড় গাছের অবস্থান আর এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন আমিরুল ইসলাম নামে জনৈক ব্যক্তি। নতুন কেউ গেলে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলছেন আপনারা পাকড় গাছকে লক্ষ্য করে সালাম দিন আর বলুন আস্সালামু আলাইকুম হাফেজ সাহেব পীর আউলিয়া কামেল বাবা আর হিন্দুরা বলুন আস্সালামু আলাইকুম জয় কালী মা। এরপর মুসলমানরা গাছকে ঘিরে একপাশে নামাজ আদায় করছেন আবার অন্য পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা আরাধনা পূজা অর্চনা করছে। বিশেষ করে মুসলমানরা পাকড় গাছের এক পাশে মাগরিবের নামাজ আদায় করছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ রোগ মুক্তির জন্য পানি, বাতসা ও কদমা নিয়ে এসে পাকড় গাছের নীচে রাখছে। মাগরিবের নামাজ ও সন্ধার পূজা শেষ হলে সবাই এক সাথে পাকড় গাছ ঘিরে রোগ মুক্তির জন্য আরাধনা করছে। কেউ কেউ টাকা পয়সা নিয়ে এসে পাকড়গাছের নীচে রাখছে। সপ্তাহে তিনদিন বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গলবার এই আসর বসে। এই আসরকে ঘিরে মেলাও বসেছে পাকড় গাছের নীচে।
বিষ্ণুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলার নাগিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আঃ আজিজ বলেন, বেশকিছুদিন ধরে এক শ্রেণীর লোকেরা এসব করছে। এসব কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছে আমিরুল ইসলাম। সে একজন মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা হয়ে কিভাবে এসব করছে তা আমার বোধগম্য নহে। এসব ভন্ডামি আর কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না।
কালী মন্দীরের দায়িত্বে থাকা নাগিরহাট বাজারের স্বর্ণকার সুবাস দেবনাথ বলেন, বছর খানের আগে বিষ্ণুদিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কঠিন একটি রোগে দীর্ঘদিন ভূগছিলেন। অনেক চিকিৎসার পরও ভালো হচ্ছিলেন না। স্বপ্নে দেখেন কালী মন্দীরের পাকড় গাছে মানত দিলে সে ভালো হবে। তারপর সেখানে মানত পরিশোধের পর সে সুস্থ্য হয়েছে। আমিরুল তাকে মন্দিরটা জাগ্রত করতে বলে। সেই মোতাবেক কাজ চলছে।
মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম বলেন, দুইবছর আগে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। দেশে বিদেশে চিকিৎসা হয়ে তার রোগ ভালো হয় না। পরে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান গ্রামের মাঠের পাকড়গাছে এমন কেউ থাকেন যার কাছে রোগ মুক্তি চাইলে সে ভালো হয়ে যাবে। তারপর তিনি সেখানে রোগমুক্তি কামনা করে সুস্থ্য হয়েছেন। এরপর মন্দিরের দায়িত্বে থাকা সুবাস দেবনাথকে বলেন তোমাদের পুরাতন কালীমন্দিরটা জাগ্রত করো। সেখানে পাকড়গাছে মানত করে আমার কঠিন রোগ ভালো হয়েছে। সপ্তাহে বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গলবার তাদের আছরের নামাজের পর থেকে পূজাঅর্চনা শুরু করতে বলি। এরপর থেকে পাকড়গাছের একপাশে হিন্দুরা সন্ধায় পূজা ও আরেক পাশে মুসলমানরা মাগরিবের নামাজ আদায় করতে থাকেন। এখানে এসে অনেকেই সুস্থ্য হচ্ছেন বলে জানান। তবে এর জন্য আলাদা কোন টাকা তিনি নেন না বলে জানান।
পাকড় গাছে মানত নিয়ে আসা কমলা রানী জানান, বিষ্ণুদিয়া মন্দিরের পাকড় গাছে যারা যারা রোগ মুক্তির জন্য আসে তা ভালো হয়ে যায়। সপ্তাহে ৩দিন চলে এ কাজ। আছরের নামাজের পর থেকে হিন্দু মুসলিম আসতে থাকে। মন্দির প্রাঙ্গনের এক পাশে মুসলমানরা মাগরিবের নামাজ পড়ে অন্য পাশে হিন্দুরা পূজা শুরু করে। আমিও তাই রোগমুক্তির জন্য এসেছি। নামাজ পূজা শেষ হলে হিন্দু মুসলিম সবাই পাকড়গাছ ঘিরে আড়াধনা করতে থাকে রোগমুক্তির জন্য। সবই নিয়ন্ত্রন করেন বিষ্ণুদিয়া গ্রামের আমিরুল নামের এক ব্যক্তি বলে জানান।
৯নং মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষ্ণুদিয়া গ্রামের এ কুসংস্কারের কথা শুনেছেন। বিষ্ণুদিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা হয়ে আমিরুল ইসলামের এসব কর্মকা- করা ঠিক না। ঘটনাটি নিয়ে তিনি দু:খ প্রকাশ করেন।
ঘটনাটি নিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তিনি জানেন না। খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।