সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শাবলের আঘাতে আপন ভগ্নিপতিকে হত্যার অভিযোগে শ্যালক আহাদ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) র্যাব-৬, সাতক্ষীরা এর আভিযানিক দলটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ২নং আসামি মো: আহাদ আলী গাজী (৪০)কে যশোর জেলার মনিরামপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো: আহাদ আলী গাজী (৪০) ওই হত্যার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা জানায়। নিহতের নাম সামছুর রহমান গাজী (৫৫) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত অবের আলীর ছেলে।
র্যাব জানায়, মো: সামছুর গাজী ছেলে মো: মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘেরে মাছ চুরির অভিযোগ করা নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে মো: সামছুর গাজীর সাথে তার শ্যালকদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বড় শ্যালক ১নং আসামি মো: ফজর আলী এবং ছোট শ্যালক ২নং আসামি মো: আহাদ আলী গাজী শাবল দিয়ে মো: সামছুর গাজীর মাথায় এবং গায়ে এলাপাথাড়ি আঘাত করে। যার ফলে েিমা: সামছুর গাজী মারা যায়। এছাড়াও তারা মো: সামছুর গাজীর স্ত্রীকেও আঘাত করে গুরতর জখম করে। পরবর্তীতে মো: সামছুর গাজীকে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ থানায় ০৬জনসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২/৩জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনা এলাকার জনমনে চাঞ্চল্য এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করে। ঘটনা সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে র্যাব-৬, সাতক্ষীরা এর একটি আভিযানিক দল আসামীদের আইনের আওতায় আনার জন্য গোপনে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) র্যাব-৬, সাতক্ষীরার আভিযানিক দলটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ২নং আসামি মো: আহাদ আলী গাজী (৪০)কে যশোর জেলার মনিরামপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
রঘুনাথপুর গ্রামের মিজানুর রহমান গাজীর স্ত্রী রেহেনা খাতুন জানান, রঘুনাথপুর বিলে তার স্বামীর ৬ বিঘা ও তার শ্বশুর সামছুর রহমান গাজীর সাড়ে ছয় বিঘা পৃথক মাছের ঘের রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তার শ্বশুর ঘেরে যায়নি। বর্ষার সময় তার স্বামী মিজানুর ঘেরের বাসায় যেয়ে জামা গেঞ্জি খুলে মামাশ্বশুর ফজর আলীসহ তিনজনকে দেখতে পায়। ঘেরের বাসায় মামাকে দেখে প্রতিবাদ করে মিজানুর। জামা ও গেঞ্জি ঘেরের বাসায় রেখে কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী কয়েকজন ঘের পাহারাদারদের নিয়ে মামা শ্বশুর চোর চোর বলে চিৎকার করলে মিজানুর জামা কাপড় ফেলে বাড়ি চলে আসে। ওই জামা গেঞ্জি নিয়ে পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিনের কাছে ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে জমা দেন। চেয়ারম্যান ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিমকে সামছুরের বাড়িতে পাঠিয়ে তার সঙ্গে মিজানুরকে দেখা করতে বলেন।
রেহেনা আরও জানান, নানা শ্বশুর আরশাদ আলীর জীবদ্দশায় দুই মামা শ্বশুর ফজর আলী ও আহাদ সব জমি লিখে নেয়। এতে পৈতৃক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হন তার শাশুড়ি মজিদা। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মামা শ্বশুর বাড়ি যাতায়াত নেই তাদের। মিজানুর নতুন ঘের করার পর তাতে মাছ ভাল হওয়ায় মামা শ্বশুর ওই ঘের থেকে মিজানুরকে উৎখাতের চেষ্টা করে আসছিল। তাদের সঙ্গে নেই কোন সম্পর্কও। দুপুরে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি জমিতে আম গাছ ও ডালিম গাছ লাগাচ্ছিলেন। স্বামী মিজানুরের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ হওয়ায় মামা শ্বশুর ফজর আলী বৃহস্পতিবার দুপুর দুটোর দিকে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির কাছ থেকে কোদাল ও শাবল কেড়ে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে স্বামী মিজানুরকে খুজতে থাকে। তাকে না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করায় শ্বশুর প্রতিবাদ করলে মামা শ্বশুর ফজর আলী তাকে কোদাল দিয়ে মাথায় ঘাড়ে, হাতে, বুকে ও পিঠে কুপিয়ে জখম করে। শ্বশুরকে রক্ষায় ছুটে গেলে শ্বাশুড়ি মজিদার বাম হাতের রিস্ট জয়েন্টের মাংশপেশীর মধ্যে শাবল ঢুকিয়ে দেয় মামা শ্বশুর ফজর আলী। স্থানীয়রা শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্বশুরকে মৃত বলে ঘোষণা করে। শ্বাশুড়িকে উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপে¬ক্সে ভর্তি করা হয়।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা: মো: হাসান জাফরী জানান, সামছুর রহমান গাজীর শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কৃষ্ণনগর ইউপির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, ফজর আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ এক ডজনের উপর মামলা রয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হালিমুর রহমান জানান, ঘাতক ফজর আলী পলাতক রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোদাল ও শাবল উদ্ধার করা হয়েছে।