মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর দে,এ মান্নান পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে প্রকাশ্যে শিক্ষক প্রতিনিধিদের ভোট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিরোধী পক্ষদের সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মাহবুব উল্লাহ শিকদার।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উল্লাহ শিকদার বলেন, সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিভাবক শ্রেণির সদস্য, দাতা সদস্য এবং শিক্ষক প্রতিনিধি মিলিয়ে ৯ ভোটের মধ্যে ৫ ভোটের প্রয়োজন হয়। অভিভাবক শ্রেণির সদস্য পদে তার প্যানেল থেকে তিনজন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দাতা সদস্য একজন এবং শিক্ষক প্রতিনিধি তিনজনের ভোট আজকে হওয়ার কথা ছিল। দুপুর দুইটা থেকে ভাটেরচর দে,এ মান্নান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে আজ শুধুমাত্র প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুপুর দুইটা থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মৌখিকভাবে জানান শিক্ষক শ্রেণির তিনজনের তিনজনই তাকে সমর্থন দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে বহিরাগত কিছু লোককে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় এ সময় তারা শিক্ষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাগজে স্বাক্ষর দিতে জোরজবস্তি করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে তাকে জানানো হয় শিক্ষক শ্রেণির প্রতিনিধিদের মধ্যে দুইজন তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। এ ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পরে জানানো হয় তিনজনই তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতেই তার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চাপে পড়ে শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে এই ধরনের কথা বলছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনি প্রিজাইডিং অফিসারকে নির্বাচন স্থগিত করে পরবর্তীতে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ করেন। প্রিসাইডিং অফিসার জাকির হোসেন তাকে বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করলেও ঘন্টাখানেক পরে জানা যায় অভিভাবক শ্রেণির প্রতিনিধি নির্বাচনে পরাজিত প্যানেল সাখাওয়াত হোসেনকে নাকি তিনজন শিক্ষকই সমর্থন দিয়েছেন। অভিভাবক শ্রেণির দুইজন, দাতা সদস্য একজন এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের তিন জনের ভোট মিলিয়ে ৬ভোটে তাকে বিজয় ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষক প্রতিনিধির ঐ তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসা করলে তারা কেউ কোন ভোট দেননি তবে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার চাপে মৌখিকভাবে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। নির্বাচনে পেশী শক্তির প্রভাব এবং মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষক শ্রেণির প্রতিনিধি ওই তিনজন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাদের মধ্যে দুইজন জানান তারা ভয়ে আছেন।
বিষয়টা সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসার গজারিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটি গঠনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডের যে পরিপত্র আছে তার ৮এর ৩ ধারা অনুযায়ী উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচন করা যাবে এ ক্ষেত্রে ভোটের বাধ্যবাধকতা নাই। প্রথমে শিক্ষক প্রতিনিধিরা মাহবুব উল্লাহ সিকদারকে ভোট দিয়েছেন এমনটা জানা যাওয়ার পরেও পরে সেটা কিভাবে পাল্টে গেলো এ প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন শিক্ষকরা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপনারা বিষয়টি নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলুন।তিনি বলতে পারবেন কিসের ভিত্তিতে এভাবে ভোট নেওয়া হলো।
বিষয়টি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বেনজির আহমেদ বলেন, প্রকাশ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কখনোই ভোট দিতে পারেন না। তিনি কোন পরিস্থিতিতে আর কিভাবে প্রকাশ্যে ভোট নিলেন এ ব্যাপারে তার কাজে জানতে চাওয়া হবে।
এ ব্যাপার মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড,ঢাকার উপ-সচিব (প্রশাসন) খান খলিলুর রহমান বলেন, আপনাদের মুখ থেকে যতটুকু শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে যথাযথ প্রক্রিয়া মানা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের লিখিত অভিযোগ করতে বলুন।
বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভোট মানেই গোপন, প্রকাশ্যে ভোট নেওয়ার কোন বিধান নাই। বিষয়টি রীতিসিদ্ধ হয়নি উল্লেখ করে এ ব্যাপারে তথ্য ব্যাক্তিদের রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করতে পরামর্শ দেন তিনি।