মহান হেরোদের রাজত্বকালে প্যালেস্টাইনের বেথলেহেমে যিশুর জন্ম। প্যালেস্টাইন তখন ছিল রোম সাম্রাজ্যের অধীনে একটি করদ রাজ্য। হেরোদ মারা যান খ্রিস্টপূর্ব ৪ অব্দে। কাজেই যিশুর জন্ম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫ অব্দে (আমরা যিশুর জন্মসালকে শূন্য ধরে খ্রিস্টাব্দ গণনা করি, ষষ্ঠ শতাব্দের এক রোমান যাজকের আনুমানিক হিসাব থেকে, যা ভুল)।
প্যালেস্টাইনের ভবিষ্যৎ রাজা বেথলেহেমে জন্ম নিয়েছেন, জ্যোতিষীদের এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে হেরোদ নিজের সিংহাসন নিরাপদ রাখার জন্য সব শিশু হত্যার নির্দেশ দেন। মা মেরি ও পিতা জোশেফ তখন শিশু যিশুকে নিয়ে মিসরে পালিয়ে যান। হেরোদের মৃত্যুর পর তাঁরা যিশুকে নিয়ে গালিলির ন্যাজারেথে ফিরে আসেন। ১২ বছর বয়সে যিশু জেরুজালেমের মন্দির দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে এ ছাড়া আর বিশেষ কিছু জানা যায় না।
যিশুর বয়স যখন প্রায় ত্রিশ তখন তিনি প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভালবাসা ও সহনশীলতার বাণী প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু কট্টর ইহুদিরা তাকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগল। নিজেকে মানবজাতির ত্রাণকর্তা দাবি করায় তিনি জেরুসালেমে গ্রেফতার হন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় ঈশ্বরনিন্দা ও অধার্মিকতার অভিযোগ। দাবি করা হয় মৃত্যুদণ্ড। জেরুজালেমের রোমান গবর্নর এ নিয়ে দাঙ্গার আশঙ্কা করে ঝামেলায় না গিয়ে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করার আদেশ দেন। যিশুকে সমাহিত করার তিন দিন পর দেখা গেল তার কবর খালি। এর কয়েক সপ্তাহ পরে যিশু আবার তাঁর শিষ্যদের দেখা দেন।
যিশুর অন্তর্ধানের পর তাঁর শিষ্যরা যিশুর বাণী ও শিক্ষা প্রচার করতে থাকেন। শীঘ্রই তাঁদের বিরুদ্ধেও ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগ আনা হল। এই অভিযোগকারীদের একজন ছিলেন টারসাসের শোল; কিন্তু তিনি নিজেই পরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং যিশুর দ্বাদশ শিষ্যের একজন হিসাবে পরিগণিত হন। তার প্রভাবেই ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার অ-ইহুদিরা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেয়।
সুসমাচার
যিশুর জীবন ও শিক্ষা আগে মুখে মুখে প্রচার করা হত। যারা যিশুকে দেখেছিলেন তারাই এসব প্রচার করতেন। কিন্তু তারা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর এগুলো লিখিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যিশুর জীবন কর্ম ও শিক্ষা সম্পর্কে এপর্যন্ত আমাদের হাতে চারটি বিবরণ পৌঁছেছে।
এগুলো ম্যাথু বা মথি, মার্ক, লুক ও জনের সুসমাচার হিসাবে পরিচিত। এর মধ্যে প্রথম তিন জনের লিখিত গল্পের দৃষ্টিভঙ্গির এক। বহু প-িতের ধারণা, মার্কই প্রথম সুসমাচার লিখেছিলেন। সম্ভবত সাইমন পিটারের স্মৃতিনির্ভর বর্ণনার ভিত্তিতেই মার্ক তাঁর সুসমাচার লিপিবদ্ধ করেন।
মথি ও লুক তাঁদের সুসমাচার লিখেন অংশত মার্ক ও অংশত অন্য কোন সূত্র অবলম্বন করে-যেগুলোর অস্তিত্ব আজ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মসি ছিলেন শুধুই ধর্মপ্রচারক, কিন্তু লুক সম্পর্কে ধারণা করা হয় তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক, যিনি সাধু পলের সঙ্গে বহু জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। তিনি {শুর দ্বাদশ শিষ্যের কার্যকলাপ সম্বন্ধেও গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
জন লিখিত সুসমাচারের বর্ণনা ভিন্নতর এবং এটি লিখিত হয়েছিল সবশেষে। ওবত এটি জেবেদির পুত্র জন অথবা জনের কাছে শুনে অন্য কেউ লিখেছিলেন। সুসমাচারগুলো লেখা হয়েছিল গ্রিক ভাষায় কারণ সে সময় প-িতদের কাছে এটিই ছিল সর্বমান্য ভাষা।