১৩০০ সালের দিকে ওসমান নামের এক তুর্কি নেতা কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে এশিয়া মাইনরে একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অনুসারী এবং উত্তরাধিকারীরা অটোমান হিসাবে পরিচিত। তারা ক্রমশ এশিয়া মাইনরে রাজ্য বিস্তার করতে থাকে এবং ১৩৪৫ সালে তারা বাইজেন্টাইন সম্রাট জন ক্যানটাকুজেনকে সাহায্য করতে এশিয়া পেরিয়ে ইউরোপে যায়। সে সময় গৃহযুদ্ধ চলছিল।
ইউরোপে পা রেখেই অটোমান তুর্কিরা দ্রুত তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। ১৪০০সাল নাগাদ কয়েকটা অভিযানের পর তারা ম্যাসিডনিয়া, সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়া জয় করে। তারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে সঙ্কুচিত করতে করতে বাইজেন্টিয়ামের (কনস্টান্টিনোপল) চৌহদ্দিতে নিয়ে আসে। তখন এর আয়তন ছিল আজকের দিনে ইউরোপের তুরস্কের আয়তনের সমান।
বাইজেন্টিয়ামকে কিছুকালের জন্য রক্ষা করেন মোঙ্গল বীর তৈমুর লং। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৪০২ সালে তিনি অধিকাংশ অটোমান সাম্রাজ্য তছনছ করে দেন। এমনকি তার মৃত্যুর পরও অটোমান সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু ১৪৫১ সালে দ্বিতীয় মোহাম্মদ নামের এক দুর্দান্ত এবং অদম্য সুলতান বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৪৫৩ সালে দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে তিনি কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন।
তার এক বিশাল গোলন্দাজ বাহিনী ছয় সপ্তাহ ধরে নগরীটিতে গোলাবর্ষণ করতে থাকে এবং তিনদিক থেকে স্থলভাগে তুর্কিবাহিনী এবং নৌপথে তুর্কি জাহাজ আক্রমণ চালায়। সর্বশেষ বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্ট্যানটাইনের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৮ হাজার। তা সত্ত্বেও তারা দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তুর্কিরা চূড়ান্তভাবে হামলে পড়বার আগে ৫৪ দিন পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। সম্রাট কনস্ট্যানটাইন নিহত হন। তিনদিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাট চালানোর পর তুর্কিরা নগরীটিকে তাদের সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে গড়ে তুলতে থাকে এবং তারা এই নগরীর নাম দেয় ইস্তাম্বুল।
কন্স্টাানন্টিনোপলের পতনকে গণনা করা হয় মধ্যযুগের অবসান হিসাবে। কন্স্টান্টিনোপলের অনেক প-িত পশ্চিমে পালিয়ে যান, তারা শিক্ষা বিস্তারে উৎসাহ জোগান এবং উচ্চতর জ্ঞানচর্চা করেনÑÑযা রেনেসাস বলে পরিচিত।