রাজা-রানির যুগটাকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার উন্মেষের সময় হিসাবেও আখ্যায়িত করা যায়। বিশেষ করে চিন্তাশীল মানুষেরা ধর্মগ্রন্থের প্রচলিত ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানান এবং তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
ইতালির বিজ্ঞানী গালিলেও (১৫৬৪-১৬৪২) যখন প্রায় শতবর্ষ আগে পোলিশ জ্যোতির্বিদ কোপার্নিকাসের আবিষ্কৃত তত্ত্বকে সত্য বলে ঘোষণা করেন, তখন বিশ্বব্যাপী শুরু হয় তোলপাড়, উত্তেজনা। কোপার্নিকাস তার তত্ত্বে বলেছেন, পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্র নয়, বরং তা ঘুরছে সূর্যের চারদিকে। তত্ত্বটি রোমান ক্যাথলিক ধর্মমত বিরোধী হওয়ায় গালিলেও শেষ পর্যন্ত প্রচ- চাপের মুখে ভুল স্বীকার করে তার কথা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন।
অপরদিকে ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্তে (১৫৯৬-১৬৫০) দর্শনের ক্ষেত্রে একই রকম বৈপ্লবিক মতামত উপস্থাপন করেন। গির্জার প্রচলিত বক্তব্যের চাইতে তিনি যুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রথম দিকে তিনি নিজের জ্ঞানসহ সকল জ্ঞানের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু পরে তিনি সিদ্ধান্তে উপনীত হন, যেহেতু তিনি চিন্তা করতে পারেন সেহেতু তিনি টিকে থাকবেন।
এছাড়াও দেকার্তে ছিলেন ‘মেকানিস্টিক ফিলসফি বা যান্ত্রিক দর্শন’ এর অন্যতম জনক। আর এই দর্শন বিশ্বব্রহ্মা-কে ব্যাখ্যা করে সম্পূর্ণ যান্ত্রিক সূত্রের ভিত্তিতে।
এছাড়া এ সময়ের সংঘটিত হয়েছে অনেক মৌলিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ১৬১৪ সালে স্কটিশ অঙ্কশাস্ত্রবিদ জন ন্যাপিয়ারের লগারিদম, ১৬১৬ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ স্যার উইলিয়াম হার্ভের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং ১৬৪৩ সালে ইতালীর বিজ্ঞানী টরিসেলির ব্যারেমিটার আবিষ্কার।