৩০ বছরব্যাপী যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ১৬১৮ সাল থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত এবং এটা ছিল অনেকগুলো যুদ্ধের সমাহার। জার্মানির পোটেস্ট্যান্ট ও রোমান ক্যাথলিক যুবরাজদের মধ্যকার একটি বিবাদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় এই প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধ। কে হবেন পরবর্তী পবিত্র রোম সম্রাট, এটাই ছিল বিবাদের মূল বিষয়। ১৬১৭ সালে রোম সম্রাট নির্বাচিত হন বোহেমিয়ার রোমান ক্যাথলিক রাজা ফার্দিনান্দ। কিন্তু মাত্র দু বছরের মাথায় প্রােটেস্ট্যান্ট ফ্রেডারিকের সমর্থকরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
ফার্দিনান্দও ছাড়বার পাত্র ছিলেন না। অল্পদিনের মধ্যেই শক্তি সঞ্চয় করে তিনি ফ্রেডারিককে পরাজিত এবং হত্যা করেন। কিন্তু এর প্রতিশোধ হিসাবে ১৬২৫ সালে রোম সাম্রাজ্য আক্রমণ করে ডেনমার্কের প্রােটেস্ট্যান্ট রাজা চতুর্থ ক্রিস্টিয়ান। ১৬২৯ সাল নাগাদ তিনিও পরাজিত হন এবং যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ফ্রান্সের রোমান ক্যাথলিক নেতা ও পোপের মন্ত্রণা সভার সদস্য রিশল্যর আর্থিক সহায়তায় বলীয়ান হয়ে সুইডেনের রাজা গাস্টেভাস এডলফাস ১৬৩০ সালে আক্রমণ করেন রোম সাম্রাজ্য। প্রথম দিকে কযেকটি যুদ্ধে বিজয় অর্জন করলেও দু বছরের মাথায় তিনি পরাজিত এবং নিহত হন।
রিশল্যুর আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় সুইডেন যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। আর এতে ইন্ধন যুগিয়ে যান ফরাসি ধর্মীয় নেতা রিশ। একই ধর্মমতের হওয়া সত্ত্বেও ফার্দিনান্দের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় শঙ্কিত এবং ঈর্ষান্বিত হয়েই রিশ বৈরী ভূমিকা থেকে সরে আসেননি। তার কাছে ধর্ম থেকেও প্রাধান্য পায় ব্যক্তিগত ভালমন্দ। এ সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিও হয়ে উঠে জটিল ও বিভ্রান্তিকর। সুইডেন ও ডেনমার্ক, দুটিই প্রােটেস্ট্যান্ট ধর্মানুসারী দেশ। তা সত্ত্বেও উভয় দেশ জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে।
অপরদিকে প্রােটেস্ট্যান্ট ফ্রান্স যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে একই ধর্মমতের দেশ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। অপরদিকে ফ্রান্সের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধে জার্মানি পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে; নিহত হয় কয়েক লাখ মানুষ। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্টফেলিয়ার শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অবসান ঘটে এই সর্বনাশা যুদ্ধের। চুক্তির শর্তানুযায়ী জার্মানিকে তার আলসেস ও ললারে প্রদেশ তুলে দিতে হয় ফ্রান্সের হাতে।