সপ্তদশ শতাব্দের প্রথমার্ধ ছিল শিল্পকলার ক্ষেত্রে দুঃসাহসী নতুনত্বের যুগ। এ সময়ের চিত্রকর, ভাস্কর, স্থপতিবিদরা গতানুগতিকতা পরিহার করে তাদের শিল্পকর্মে নিয়ে আসেন দৃষ্টিনান্দনিকতা ও বাস্তবতা। এ সময়ে প্রতিকৃতি অঙ্কন শিল্পীদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন দুই ডাচ শিল্পী স্যার এন্থনি ভ্যান ডাইক (১৫৭৭-১৬৬০) ও স্যার পিটার পল রুবেনস (১৫৭৭-১৬৬০) এবং স্পেনীয় শিল্পী দিয়াগো ভেলাসকেস। প্রথম দুজন ইংল্যান্ডে শিল্পচর্চা করে ব্যাপক খ্যাতি ও অর্থবিত্ত অর্জন করেছিলেন।
এ সময়ে স্থাপত্য শিল্পের দুই দিকপাল ছিলেন ইতালীয় শিল্পী জিওভান্নি লোরেঞ্জো বেরনিনি (১৫৯৮-১৬৮০) ও ফ্রান্সেসকো বোরোমিনি (১৫৯৯-১৬৬৭)। স্থপতি বেরনিনির অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম হচ্ছে রোমের সেন্টপিটার্সের মূল বেদীর ওপর চাদোয়ার নকশা প্রণয়ন। আর বোরোমিনি তৈরি করেছিলেন অনেক বিখ্যাত গির্জার নকশা, যা আজকের দিনের স্থপতিদেরও বিস্মিত করে, শ্রদ্ধা জাগায়। এ ছাড়া প্রায় একই সময়ে ব্রিটিশ স্থপতি ইনিগো জোন্স (১৫৭৩-১৬৫২) প্রচলিত ধারার বিপরীতে গিয়ে অনেকগুলো ভবনের নকশা তৈরি করেন এবং ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তার স্থাপত্য রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল বাহুল্য বর্জন, সারল্য ও সুরুচিসম্পন্ন আনুপাতিকতা।
সঙ্গীতের পাশাপাশি এ সময়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল অপেরা (গীতিনাট্য) এবং অরেটোরিও বিকাশের জন্যও। প্রথম গীতিনাট্য ডাফনে’ রচনা করেন ইতালীয় কম্পােজার জ্যাকোপো পেরি (১৫৬১-১৬৩৩)। ডাফনে রচিত হয় ১৫৯৪ সালে। বর্তমানে এটির কোন কপি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অপেরা শিল্পের নবরূপ অরেটোরিও’র আদি জনক হচ্ছেন ভেনিসের ক্লদ মতেভার্দ (১৫৬৭-১৬৪৩) এবং তাঁর শিষ্য ফ্রান্সেসকো ক্যাভাল্লি (১৬০২-১৬৬৭)। অরোটোরিও হচ্ছে অপেরারই ভিন্নরূপ, যাতে অভিনয় ও দৃশ্যাবলি বাদ দিয়ে পরিবেশন করা হয় ধর্মীয় চেতনামূলক বিষয়। মূলত ছুটির দিনগুলোতে এটা মঞ্চস্থ করা হতো।