মুঘল যুগে ভারত উপমহাদেশ শাসকদের ঐশ্বর্যের সর্বকালীন সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে। মুঘল বাদশাহ খ্যাত হন ‘গ্রেট মুঘল বা রাজ রাজেশ্বর রূপে। এই বংশের প্রত্যেক শাসকই আপন আপন ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল। বংশটির প্রতিষ্ঠাতা জহীরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর (১৪৮৩-১৫৩০)। তিনি ছিলেন চুঘতাই বা বারলাস গোষ্ঠীর তুর্কি। বাবর পিতার দিক থেকে তৈমুর ও মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর। তিনি ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী ও ১৫২৭ সালে আগ্রার অদূরে খানুয়ায় রাজপুত মিত্রশক্তি রানা সংঘকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে তিনিই আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবর্তক। হুমায়ুন (১৫০৮-১৫৫৬) ছিলেন শিষ্টাচারী, জ্যোতির্বিদ ও কাব্যামোদী। মহামতি আকবর (১৫৪২-১৬০৫) ছিলেন উপদেশে জাতীয় রাজতন্ত্র, কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, ধর্মনিরপেক্ষ, সংস্কৃতি, তুলনামূলক ধর্মচর্চা ও আধুনিক জাতীয়তাবোধের পূর্বসূরী, সঙ্গীত সম্রাট তানসেনের পৃষ্ঠপোষক ও লাল পাথরের কল্পপুরী ফতেপুর সিক্রির শিল্পকার। জাহাঙ্গীর (১৫৬৯-১৬২৭) ছিলেন চিত্ররসিক, প্রকৃতিবিদ ও নিসর্গপ্রিয়। পত্নী-প্রাণ শাহজাহান (১৫৯২-১৬৬৬) ছিলেন বিশ্বের সর্বকালীন ধনবান সম্রাট। মর্মর-স্বপ্ন তাজমহলের স্রষ্টা, ঐশ্বর্যময়, ময়ূর সিংহাসন, কোহিনূর হীরক প্রভৃতি অমূল্য সম্পদের অধীশ্বর, আওরঙ্গজেব (১৬১৮-১৭০৭) ছিলেন ফার্সি গদ্যের ওস্তাদ ও ভারতে ঐক্যবদ্ধ এক রাষ্ট্র স্থাপনে ব্রতী। ..
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর থেকে ১৮৫৮ সালে শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শা পর্যন্ত দেড়শ বছর ধরে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন থেকেছেন কোন না কোন মুঘল বাদশাহ আর এই দীর্ঘকালের মধ্যে সাম্রাজ্য ভেঙ্গেছে, ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং শেষে সিপাহি যুদ্ধে বা ভারত স্বাধীনতার ব্যর্থ সংগ্রাম শেষে দিল্লির সিংহাসন শূন্য হয়েছে।