রাজশাহীর মোহনপুরে গৃহবধূর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে জনসম্মুখে এক যুবককে কান ধরে ওঠবস করিছে ইউপি সদস্য। ওই ঘটনায় দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে তালাক দিয়েছে তার স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টায় সময় মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ায়। সালিশে ইউপি সদস্য'র এমন কর্মকা-ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন উপস্থিত জনগণ। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া রফিকুল ইসলাম রফিকের ছেলে শফিকুল ইসলামকে একই গ্রামের জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে মঙ্গলবার বিকালে পান বরজে অনৈতিক অবস্থায় দেখতে পায় রিয়াজ নামের এক ব্যক্তি। তারপর বখাটে যুবক শফিকুল ইসলামকে আটক করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল পাপুল। শুরু হয় উভয় পক্ষের মারপিট। ওই সময় নিরভ ভূমিকা পালন করেন ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল পাপুল। ঘটনার কিছু ক্ষণ পর ওই গৃহবধূর স্বামী কাজী ডেকে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। তারপর স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতে গ্রাম্য সালিশ শুরু করেন ইউপি সদস্য। জরুরি ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মোহনপুর থানার পুলিশ। কিন্তু পুলিশ গিয়ে ঘটনাটি শুনার পর বলেন, " মুরগী চোরের বিচার যেন গরু চোরের মত না হয়" এমন কথা বলে পুলিশ চলে আসেন। তারপর ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল পাপুল পুলিশের উদাহরণ দিয়ে পুনরায় শুরু করে নাটকীয় সালিশ। অভিযুক্ত যুবককে বাঁচানো চেষ্টা করতে থাকে তিনি। বখাটে যুবককের কারণে গৃহবধূর সংসার ভেঙ্গে গেল, এমন প্রশ্ন স্থানীয়রা করলে ইউপি সদস্যসহ গ্রাম্য মাতব্বররা বিষয়টি বার বার এড়িয়ে যান। শুরু হয় সালিশ-বৈঠকে চরম উত্তেজনা। প্রায় পাঁচ ঘন্টা সালিশ করে ওই যুবককে 'কান ধরে ওঠবস' করিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয় ইউপি সদস্য।
তবে ওই গৃহবধূর নিকটতম এক আত্মীয় বলেন, বখাটে যুবক 'কান ধরে ওঠবস' করেই পার পেয়ে গেল। কিন্তু দুইটি সন্তান থাকার পরেও একটি সাজানো গুছানো সংসার ভেঙ্গে গেল এ বিষয়ে ইউপি সদস্যসহ মাতব্বরদের তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল পাপুল ফোন ধরে প্রথমেই বলেন, যা দেখেছেন তাই হয়েছে। সালিশে কোন অপরাধীকে কান ধরে ওঠবস করানোর নিয়ম রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের অনুমতি নিয়ে সালিশ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু জানতে চাইলে মোহনপুর থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। সালিশে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে 'কান ধরে ওঠবসের' নিয়ম রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা করতে পারেন না।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ্-জোহরা বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সালিশে কোন ব্যক্তিকে 'কান ধরে ওঠবস' করানো যাবে না। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে। যদি ইউপি সদস্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে ওই ইউপি সদস্য'র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে"।