চিত্রা নদীর তীব্র ¯্রােতে সাঁকোটির একাংশ ধসে পড়েছে। দুই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। নদীর ওপর সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেকটা রাস্তা ঘুরে বিদ্যালয়ে যায়। বাজারে যেতেও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের একতারপুর এলাকার লোকজন এই ভোগান্তিতে রয়েছে। এসব ভোগান্তির থেকে রেহাই পেতে প্রায় এক বছর আগে এলাকার স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। গত এক সপ্তাহ রাতে ¯্রােতে সাঁকোটির একাংশ ভেসে গেছে। ফলে সাঁকো দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
চিত্রা নদীর ওপরে থাকা সাঁকোটির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি খুঁটি আর ২০ ফুট পাটাতন এখনো ঝুলে আছে। শিক্ষার্থী ও বাজারের ব্যবসায়ীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বলেন, তাঁরা কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা। নদীর অপর প্রান্তে মালিয়াট ইউনিয়ন। নদীর ওপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
রায়গ্রাম ইউনিয়নের একটি বাজার হলো একতারপুর বাজার। চিত্রা নদীর ধারে একতারপুর গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাশেই একতারপুর বাজার ও একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নদীর অপর পাশে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানের কয়েক ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। ছেলেমেয়েরা নদী পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে থাকে। বর্তমানে সাকোটি ভেঙ্গে যাবার কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে পারছে না,অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে চলছে এসএসসি পরীক্ষা,তাদের ও ভোগান্তির শেষ নেই। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সাঁকোটি চালু হয় এলাকাবাসী ও ছাত্রদের সহযোগিতায়। এলাকায় একতারপুর ও মঙ্গলপোতা বাজারের অবস্থান। একতারপুর ছাড়াও দেবরাজপুর, জটারপাড়া, ভাতঘরা, পারখির্দ্দা, গয়েশপুর, ষাটবাড়িয়া, মনোহরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করে। নদীর ওপর সেতু না থাকায় কখনো নৌকায় আবার কখনো অনেকটা রাস্তা ঘুরে চলাচল করতে হয়।১,শ ফুটের একটি বেইলী ব্রীজের অভাবে বর্ষা মৌসুমে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী কে ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। দীর্ঘদিনেও ব্রীজটি না হওয়ায় এ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। শুস্ক মৌসুমে নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো থাকলেও বর্তমানে সাকোটি পানির ¯্রােতে ভেঙ্গে গেছে। এখন তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয় অথবা যেতে হয় ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে। বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিত্রা নদী পার হওয়ার সময় গত বছর পা পিচলে নদীতে ডুবে মারা যান ঘোপপাড়া গ্রামের শিবু রায়ের ছেলে শিব পরামানিক। এ সময় আহত হয়েছেন ষাটবাড়িয়া গ্রামের প্রশান্ত, বলাকান্দা গ্রামের মতিয়ার রহমানসহ অনেকেই।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ চিত্রা নদীর এপারে ইছাখালি, একতারপুর, দেবরাজপুর, জটারপাড়া, বনখির্দ্দা, ঘোপপাড়া, ভাটাডাঙ্গা, ফরিয়াদকাঠিসহ অন্তত ২০ টির অধিক গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য লোকজনকে হাট-বাজার করতে ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যেতে হয় নদীর ওপারে। নদীর ওপারে আছে বেথুলী বাজার, আবু বক্কক বিশ্বাস ও মকছেদ আলী কলেজ, চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিএসবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ মল্লিকপুর, ষাটবাড়ীয়া, মনোহরপুর, বলাকান্দর, জহুরপুর, দিঘেরপাড় বসুন্ধরা, চাপরাইল, নগর চাপরাইলসহ একাধিক গ্রাম।
সাধারণ জনগনকে হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হয় বেথুলী বাজারসহ অন্যান্য স্থানে। তাদের একমাত্র পারাপারের ভরসা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। বছরের শুস্ক মৌসুমে তারা এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে নদীর ওপারে যেতে হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম হলেই এলাকাবাসীকে ভোগান্তিরতে পড়তে হয়। এ সময় নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে চলাচল করতে পারছে না। উপায়ান্ত না পেয়ে তাদের নৌকা, ভেলায় নদী পার হতে হয় অথবা ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয় বেথুলী বাজারে আর সেখানে অবস্থিত স্কুল-কলেজে। ঝরণা রানী সাহা নামের এক কলেজ ছাত্রীর মা জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানির ¯্রােতে সাঁকো ভেঙ্গে যাওয়ায় খুবই সমস্যায় আছি। মেয়েটি ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজে গেছে। কন্তু আজ আর কলেজে যেতে পারেনি।
ওই এলাকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ১৯৯৩ সালে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের এ সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নমূলক নানা কাজ করা হয়। সংগঠনের সভাপতি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের শিক্ষার্থী ফিরোজ হোসেন বলেন, তাঁরা চিত্রা নদীর ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণের দাবিতে এলজিইডিসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে ঘুরেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। একপর্যায়ে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে একতারপুর ঘাটে একটি সাঁকো তৈরি করেন। আশপাশের গ্রাম থেকে ৪০০ বাঁশ সংগ্রহ করেন। গ্রামের মানুষও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ২৫ দিনে সাঁকোটি তৈরি করেন। বাঁশ ছাড়া এ কাজে তাঁদের খরচ হয় ৬২ হাজার টাকা। এলাকার মানুষ এই টাকা দেয়। ২০২১ সালের ২২ জুলাই সাঁকোটি চালু হয় জাঁকজমক ভাবে। বাঁশগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে নানা স্থানে চলে গেছে। ভেসে গেছে আমাদের স্বপ্নের সাঁকোটি। এলাকার মানুষের কষ্ট আবারও বেড়ে গেছে। আমরা এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’