কিছুদিন আগেও বড় অঙ্কের টাকা বিদ্যুত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও নোটিশ ছাড়া নগরীর সব সড়কবাতি ও পানির পাম্পের বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। যাতে নগরবাসী ভোগান্তিতে পরে। কারণ একবছর পরেই নির্বাচন। আমি মনে করছি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ওজোপাডিকো সড়ক ও পানির বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগ সরকারের বদনাম হবে। সে কাজটি তারা করেছেন।
নগরীর কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে বুধবার দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেছেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
মেয়র সিটি কর্পোরেশনের বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার জন্য আগের মেয়াদের মেয়রদের দায়ী করে বলেন, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে ২০ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া ছিল। তিনি এক টাকাও পরিশোধ করেননি। পরবর্তী সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে বকেয়া ছিল ২১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৯ টাকা। এরমধ্যে এক কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ১২২ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আমার আমলে ১৫ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা বকেয়া। ইতোমধ্যে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ২০৭ টাকা পরিশোধ করেছি। নিয়মিত বিল পরিশোধ করা সত্বেও আমার বিদ্যুৎ লাইন কাটা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, আমি তো সাবেক মেয়রদের বকেয়া বিলের টাকা পরিশোধ করবো না। তিনি (মেয়র) আরও বলেন, বকেয়া বিলের কারণে দরকার হলে নগর ভবনের লাইন কেটে দিতো। কিন্তু নগরবাসীর ভোগান্তির সৃষ্টি করে সড়ক বাতির লাইন ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া উচিত হয়নি।
মেয়র বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও অনেক সিটি কর্পোরেশন শক্তিশালী রয়েছে। তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আমাদের চেয়েও বেশি। কিন্তু তাদের সড়ক ও পানির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি ওজোপাডিকো। আমাকে কোনো দিক থেকে ঘায়েল করতে না পেরে এই স্থানটি খুঁজে বের করেছে।
মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন এবং আমাকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ২৫ কোটি টাকা দিতে বলেছেন। এখন আমি টাকা কোথায় পাবো? আমি আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে বলেছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার সকালে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বরিশাল বিভাগের পরিচালনা ও সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাছে ১১২টি হিসেবের অনুকূলে মোট ৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৩ টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা তাদের বারবার নোটিশ দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে লাইন বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।
উল্লেখ্য, গত তিনদিন পূর্বে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর বিভাগীয় শহর বরিশাল নগরী এখন ভূতুরে নগরীতে পরিনত হয়েছে। পাশাপাশি নগরবাসীর মধ্যে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।