সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের শিল্পীরা। আগামী (১ অক্টোবর) থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৮৪টি পূজা ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলায় ২০৭টি, বাসাইলে ৬৫টি, সখিপুরে ৫৩টি, মির্জাপুরে ২৫৬টি, নাগরপুরে ১৩২টি, দেলদুয়ারে ১২৭টি, গোপালপুরে ৫০টি, ভূঞাপুরে ৪০টি, কালিহাতীতে ১৯০টি, ঘাটাইলে ৮১টি, মধুপুরে ৫০টি ও ধনবাড়িতে ৩৩টি পূজা ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা ম-পের সংখ্যা ছিল ১২৪৩টি ও চলতি বছর ১২৮৪টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪১টি পূজা ম-পের সংখ্যা বেড়েছে।
জেলার তারটিয়া প্রতিমা তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন ম-পে ঘুরে দেখা গেছে, তারটিয়া কারখানায় শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কেউ দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড় আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে।
তারটিয়া এলাকার প্রতিমা তৈরির কারিগর বসন্ত পাল বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার আমি ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমার কারখানায় ২-৩ জন কর্মচারীসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সব কিছুর দাম আগের তুলানায় অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষে না। জাতিগত কাজ এজন্য করতে হয়।
তারটিয়া এলাকার সন্ধ্যা রানী পাল বলেন, আমি পরিবারের কাজকর্ম করে যে সময় টুকু থাকে আমার স্বামীর সাথে প্রতিমা তৈরি কাজে সাহায্য করি। সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এ জন্য, আমরা এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছি।
দুলাল পাল বলেন, এ বছর ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। এখন রঙ তুলির কাজ চলছে। মাটির কাজ সব শেষ করছি। এ পর্যন্ত ৪টি রঙ করছি। ৬টি প্রতিমা বাকি আছে রঙ করার জন্য। আমরা রাত দিন জেগে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেয়ার সুযোগ নেই। খাওয়া দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।
প্রতিমা শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেক ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে ৪ থেকে ৫ জন শিল্পী এক সাথে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।
টাঙ্গাইল পৌর এলাকার আদালত পাড়া পুজা সংসদ, শ্রী শ্রী কালিবাড়ী টাঙ্গাইল, কালীহাতী সহদেবপুর ইউনিয়নের ভুক্তা চৌধুরী বাড়ি, গিয়ে দেখা যায়, শিল্পী নিশি কান্ত পাল প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, এছাড়াও আরও ৫টি প্রতিমা রঙ করার বাকি আছে। ৭-৮ দিনের মধ্যে এগুলোর কাজও শেষ হবে।
টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ঝন্টু জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮৪টি পূজা ম-পে পূজা হবে। এজন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজা ম-পে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ম-পে পুলিশ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, জেলার প্রতিটি পূজা ম-পে নামাজের সময় সূচি টাঙানো জন্য বলা হয়েছে। পূজা কমিটিকে ম-পগুলোতে পূজা চলাকালীন সময় সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের পুলিশের মোবাইল টিম সবসময় কাজ করবে।