বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। ফলে আগামীতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে বিএনপি। তবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বিএনপিকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মোকাবিলা করতে হবে। যেটি বিএনপির জন্য বড় কষ্টের।’ শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজশাহী নগরীর একটি হোটেলে বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি আগের মতোই শক্তিশালী দল দাবি করে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এ সরকার তার পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে দেশে এত গুম, খুন, অত্যাচার ও মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাস্তানাবুদ বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, এরপরও বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন। শুধুমাত্র এটা দেখেও বর্তমান সরকারের বোঝা উচিত যে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাড়াবে। যেটি ইতিমধ্যেই দেশবাসী বুঝে গেছে। এ কারণে জনগণ বিএনপির সাথেই আছেন। আর বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ না হয়ে, দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হবে বলেও উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সভার শুরুতেই 'জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য' সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত প্রবন্ধে বিএনপির আগামী রাজনৈতিক আন্দোলন, নির্বাচনী রূপ রেখা ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপি মিডিয়া সেল সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। সমন্বয়কারী ছিলেন অধ্যাপক ডক্টর মোর্শেদ হাসান খান। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। গতানুগতিক আন্দোলন করে কোন লাভ হবেনা। কারণ এই সরকার ভোটহীনভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। জনগণের নিকট এই সরকারের কোন জবাবদিহিতা নাই। বিধায় তাঁকে বিতাড়িত করতে গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দলকে একত্র হতে হবে। আর শুধু এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করলে হবে না। সরকারের মূল দোশর বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাদ দিয়ে নতুন করে জনগণের নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই সাথে দেশের সকল ধরনের মিডিয়াতে দলীয় কর্মসূচীগুলো ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, দেশের অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। নিত্যপন্যের ঊর্ধ্বগতি এবং অন্যদিকে রিজার্ভ ফান্ড কমে যাওয়ায় ব্যাংক সমুহে আর্থিক সংকট বেড়ে গেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানীতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জনগণ অত্যন্ত খারাপ সময় পার করছে। যে কোন সময়ে দেশের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আর এটি ঘটলে সম্পূর্নভাবে দায়ী হবেন এই বিনা ভোটের সরকার। যে সরকারের নেতারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বাড়ি গাড়ি তৈরী করেছে। এখন আবার সব থেকে জালিয়াত ও চুরির যন্ত্র ইভিএম মেশিন ক্রয় করার জন্য নির্বাচন কমিশনার উঠেপড়ে লেগেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বাজেট চেয়েছেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম মার্শাল, রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. এরশাদ আলী ঈশা, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ দলীয় নেতাকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।