আগামী ১ অক্টোবর শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯টি উপজেলার ৬০৫টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। গত বছর ৫৮৪টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুর্গাপূজা। গত বছরের তুলনায় এবছর বেড়েছে ২১টি মন্ডপ।
জেলার ৬০৫টি মন্ডপের মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় (পৌরসভাসহ) ৭৮টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৫১ টি, নবীনগর উপজেলায় ১৩৩ টি, বিজয়নগর উপজেলায় ৫৭টি, সরাইল উপজেলায় ৪৯টি, কসবা উপজেলায় ৫৪টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪৭টি, আখাউড়া উপজেলায় ২২টি ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৪ টি।
পূজার সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে প্রতিটি মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরীর শেষ মুহুর্তের কাজ। প্রতিটি মন্ডপে রঙের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বর্ণিল সাজে। পাশাপাশি চলছে প্রতিমাকে কাপড় পড়ানোসহ মন্ডপের সাজসজ্জার কাজ। দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী দূর্গার পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে গজে (হাতির পিঠে চড়ে) আর বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। দেবী দূর্গার আগমনের ক্ষণকালে ভক্তরা সকলেই পুলকিত।
এদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা পালনের জন্য সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দ, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিটি মন্ডপের দায়িত্বশীলদের সাথে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পাশাপাশি পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সূর্যাস্তের আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডার বাসিন্দা রাজু দেব ও লিটন সাহা বলেন, আমারা মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলী অর্পনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এবার মায়ের কাছে দেশের জন্য দশের জন্য প্রার্থনা করবো।
শহরের পূর্ব পাইকপাড়া গগনসাহা বাড়ি রোডের সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা বলেন, মায়ের আগমনে আমরা অনেকটাই পুলকিত। আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনেই পূজার আয়োজন করেছি। ইতিমধ্যেই আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। মন্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। এখন চলছে প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ।
জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের বাসিন্দা মৃৎশিল্পী বলেন পাল বলেন, পূজার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। আমরা এখন প্রতিমার গায়ের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূজারিদের কাছে প্রতিমা তুলে দিতে হবে। তারা প্রতিমা নিয়ে নিজ-নিজ মন্ডপে স্থাপন করবেন।
একই ধরনের কথা বললেন মৃৎশিল্পী মলাই চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, এখনো কিছু কাজ বাকী আছে। যার কারণে ব্যস্ত সময় পার করছি, রাত-দিন কাজ করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কান্দিপাড়া রঘুনাথ জিউর আখড়ার প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু পাল বলেন, গত বছর করোনার কারণে পূজার তেমন চাকচিক্য ছিলো না। প্রতিমার আকার ছিলো ছোট। তবে এবার পূজার চাহিদা অনেক বেশি। এ বছর ১৯টি মূর্তির অর্ডার পেয়েছি। সব গুলো মূর্তিই বড় আকৃতির।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, এ বছর জাঁকজমকপূর্নভাবে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছি। জেলা প্রশাসনের দেয়া নির্দেশনা মেনেই পূজা উদযাপন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চন্দ্র সাহা (বাপ্পি) বলেন, এ বছর জেলার ৬০৫ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উদযাপন নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের সাথে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই আমরা পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, শান্তিপূর্নভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, এ বছর জেলায় ৬০৫টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সূর্যাস্তের আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।