রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আয়োজিত বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উদ্্যাপন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ. মান্নান বলেছেন, ‘রোল মডেল খুঁজতে আমাদেরকে বিশ্বের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকান। সময়ানুবর্তিতার উদাহরণ হিসেবে আমরা বিভিন্ন দেশকে দেখি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়ানুবর্তিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। আর একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যতগুণ থাকা দরকার প্রায় সবগুণই রয়েছে শেখ হাসিনার। কেননা তিনি মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করেন। যে কারণে কোনো প্রকল্প অনুমোদন হতে গেলে সেটা জনগণের স্বার্থে হচ্ছে নাকি কোনো ব্যবসায়ী-আমলাদের উপকারে হচ্ছে সেটা আগে যাচাই করেন তিনি। যার জন্য দেশে আজ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।’ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন। তিনি হচ্ছেন দেশের তথ্যের আকর। তাঁর জ্ঞান ও আকাক্ষা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। তাই শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ সমার্থক। তাঁর লক্ষ্য সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের লক্ষে এগিয়ে চলা। তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার রাষ্ট্রনায়ক। তিনি দৃঢ়তার সাথে সংকট সামাল দেন এবং হতাশাকে আশার আলোয় ঢেকে দেন। দেশের মঙ্গল ভাবনা তাঁর মানসে প্রোথিত। দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তাঁকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত।
রাজশাহীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকার রাজশাহীসহ দেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। ইতোমধ্যে রাজশাহীর উন্নয়নে পাঠানো প্রস্তাবগুলি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অক্ষুন্ন থাকবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রস্তাব বিবেচনার সময় সম্পদের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবহারে সরকার বদ্ধপরিকর।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন তৃণমূল মানুষের নেত্রী। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সফরকালে কখনো বিলাসবহুল হোটেলে রাত্রীযাপন করেননি বরং সরকারি জায়গায় থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের সমস্যার কথাগুলো জেনে সেই অনুযায়ী কাজ করে আজকের বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে এনেছেন। এই বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বে পাহাড়ে অরাজকতা বন্ধ হয়েছে। পাহাড়িরা আজ দেশের অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে আজ বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজ হচ্ছে যা জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে তারাও স্বাবলম্বী হচ্ছে। এছাড়াও তাঁর সমুদ্রনীতি ভারতের সাথে নদী চুক্তিসহ বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরে মেয়র লিটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সফলতা কামনা করেন।
রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ জার্মান প্রবাসী লেখক সরাফ উদ্দিন আহমদের ‘১৫ আগস্ট হত্যাকা-: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ জীবন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়। সভাটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দিনটি বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে।
এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বিশেষ অতিথি ক্যাম্পাসে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং শহীদ মিনার ও শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিকেল তিনটায় পরিকল্পনামন্ত্রী বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘর ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রেনেসাঁর অগ্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা তাঁর হাত ধরেই দেশ আজ উন্নয়নের দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেমন জমজ শব্দ, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনা দুটি যমজ শব্দ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ভারত থেকে পুনরায় যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন এবং আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন, তখনই জাতির উন্নয়নের একটি বীজ বপন হয়েছিল। যার জলন্ত উদাহরণ আজকের এই বাংলাদেশ। মহান এই নেত্রীর জন্মদিনে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
উপাচার্য আরো বলেন, ১৯৮১ সালের মে মাসে আজকের এই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে যে প্রক্রিয়ার সূচনা করেন, প্রকৃতপক্ষে তা এক রেনেসাঁর সূচনা। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু এসময়টা তিনি বাঙালি জাঁতি তথা বাংলাদেশের উন্নয়নের চিন্তা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা অনেকটাই পেয়েছিলেন। এ কারণে তিনি বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন বুঝতে পেরেছিলেন। তাই আজ আমরা শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত কল্যাণকামী রাষ্ট্রের দর্শন দেখতে পাই। শেখ হাসিনার আদর্শ, তাঁর মহত্ম ও জাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা স্বল্পপরিসরে বর্ণনা সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে দেশ, ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, দেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আজ বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, স্বল্পমূল্যে চালসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। দেশে কেউ আর না খেয়ে থাকে না। অথচ একটা মহল আজ এ উন্নয়ন সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রে নেমেছে, লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে মারপিটে মেতেছে। তাই তাদেরকে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নিকট অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু প্রশিক্ষণ জমা দেইনি।