শিশু কন্যা নির্যাতন নিয়ে চারিদিকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। কিন্তু কিছুতেই শিশু কন্যা নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ হলেও তা ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৫৭ কন্যাশিশু ধর্ষণের, ১৮৬জন হত্যার, ১৩৬ জন অপহরণ ও পাঁচারের, ১৫ জন পর্নোগ্রাফির, ৩ জন অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এ সময় আত্মহত্যা করেছে ১৮১ জন কন্যা শিশু। এ ছাড়া ১৩ জন যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে বছরের প্রথম ৮ মাসে ১৫ টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে গৃহ শ্রমিকের। এদের দু’জনকে হত্যা করা হয় এবং একজন আত্মহত্যা করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশের ২৮ টি জেলায় ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি মাসে ২৮৮ জনের বাল্য বিবাহ হয়েছে। এ সময় ৫৮৯ টি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জাতীয় শিশু কন্যা দিবস উপলক্ষে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ‘কন্যা শিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২২’ এ তথ্য তুলে ধরা হয়। তারা দেশের ২৪ টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম থেকে কন্যা শিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারা বাল্য বিবাহ সংক্রান্ত কিছু তথ্য একেবারে তৃনমূল পর্যায় থেকে নিয়েছে। এদিকে করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ পরিস্থিতির ওপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২০ টি জেলায় ২ হাজার ৮২০ জন মেয়ের ওপর জরিপ করা হয়। ওই মেয়েদের মধ্যে করোনা মহামারির প্রথম দু’ বছরে প্রায় ২৭ শতাংশ মেয়ের বাল্য বিবাহ হয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২১ সালে ১১ হাজার ৬৭৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। আর এ ছাত্রীরা গত বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয় নি।
আগামী প্রজন্মের এসব শিশু কন্যাদের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা খুবই জরুরি। কাজেই শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শিশু কন্যা নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে শিশু নিরাপত্তা ও তাদের বেড়ে ওঠার তদারক করার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। বাল্য বিবাহ বন্ধে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে সাইবার সচেতনতা। সর্বোপরি আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে শিশু নির্যাতন। আজকের শিশুদের জন্য যদি আমরা নিরাপদে বেড়ে উঠতে দিতে না পারি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কাজেই সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত শিশু কন্যার নিরাপত্তার দিকে।