ধর্মীয় সম্প্রীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। এ জন্য বিশ্বের সকলেই ব্যাপক প্রশংসা করেন। দেশের এ অবস্থা চলছে আবহমান কাল থেকেই। স্বাধীনতাত্তোর এর আরো উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের পবিত্র সংবিধানেও সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ধর্ম যার যার, শ্রদ্ধা-সন্মান-উৎসব-রাষ্ট্র সবার।তাই প্রতিটি ধর্মের সব ধর্মীয় উৎসবেই ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকলেই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান, উৎসবে মেতে উঠেন। অর্থাৎ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। উৎসবের দিনে সরকারীভাবে ছুটি থাকে। গণমাধ্যমগুলো বিশেষ খবর ও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। দেশবাসীও সাধ্যমত সকলেই প্রচুর কেনা-কাটা করেন। প্রিয়জনদের ভাল উপহার দেন। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা একে অপরের বাড়ীতে যাতায়াত করেন। প্রায় সব বাড়ীতেই সাধ্যমত বিশেষ খানার ব্যবস্থা করা হয়। অন্য ধর্মের মানুষরাও তাতে শরীক হন। কারো মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকে না। ফলে সকলের মধ্যে মহামিলন ঘটে। এতে বন্ধন আরো দৃঢ় হয়। কোন কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। এমনকি একই আঙিনায় বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ও আছে। যেমন: লালমনিরহাট শহরের পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত। সেই ১৮৩৬ সাল থেকেই চলছে এই দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। যে যার মতো ধর্ম পালন করছেন এখানে। কোন সমস্যা হয়নি এ পর্যন্ত। এরুপ অবস্থা আরো অনেক স্থানে রয়েছে। অবশ্য ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এ দেশের সকলেই সুখে-দুখে,বিপদে-সুসংবাদে একসাথে মিলে-মিশে থাকেন।এটাই বাংলার চিরন্তন রূপণ্ডঐতিহ্য। তথাপিও বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটা অপকর্ম যে ঘটে না, তা নয়। কিছু দুষ্কৃতকারী হঠাৎ করে কিছু ধর্মীয় স্থানে কিংবা প্রার্থণালয়ে আক্রমণ করে, ভাঙচুর করে। কিন্তু সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করেন। সারা দেশের মানুষ সংশ্লিষ্ট ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার হন। ফলে নিমিষের মধ্যেই সে জঘন্য অপকর্মের ক্ষত প্রশমিত হয়ে যায়। আবার সকলেই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান।
সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। আগামী বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এটা তাদের সবচেয়ে প্রিয় ও বড় উৎসব। এবারের দুর্গাপুজায় দেশে সর্বাধিক পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপেই প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে।শিল্পীরা মনের মাধুরী দিয়ে প্রতিটি প্রতিমাই বর্ণিল সাজে সজ্জিত করেছেন। ভক্তরা দল বেধে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে অত্যন্ত আনন্দ উচ্ছ্বাসের সাথে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন। শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ভক্তি করছেন।প্রার্থনা করছেন। অন্য ধর্মের লোকরাও দল বেধে পূজামন্ডপগুলো পরিদর্শন করছেন।আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বত্রই শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দরা পূজা পালনকারীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মঙ্গল কামনা করছেন।সারা দেশে উৎসবভাব বিরাজ করছে। ফলে এটা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ হোক, আরো সুসংহত হোক,আরো দৃঢ় হোক, দেশের আরো শান্তি ও উন্নতি হোক এটাই প্রত্যাশা। সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলের প্রতি রইলো শারদীয় শুভেচ্ছা।